কবিতা

নতুন বছর

Posted on

নতুন বছরের নতুন দিন আমার সামনে দাঁড়িয়ে
দুটি হাত বাড়িয়ে ।
খ্রীষ্ট জন্মের দুহাজার সতেরো বছর পরে,
আবার একটা নতুন বছর
কালের হাত ধরে ।
পেরিয়ে সাত লক্ষ ছত্রিশ হাজার সাতশো আটটি রাত,
ওই শুনি দরজায় তার করাঘাত ।
এই বিপুল কালের ব্যবধানে এসেছেন কত মহামানব
তাদের কেউ ইতিহাসের পাতায় রেখেছেন অবদান
কাউকে মানুষ গেছে ভুলে, দেখেনি
তার হল নাকি অভিমান ।
অবশেষে তারা ডুব দিয়েছে,
মহাকালের অতল সাগরে ।
তাদের কাহিনী ফেরে লোকের মুখে মুখে
প্রান্তরে, নগরে ।
এসেছে প্রবল পরাক্রমী রাজা-মহারাজা
করেছে রাজত্ব,
অবশেষে তাদের বিজয় পতাকাও মিশেছে ধুলোয় ।
তবু, যুগে যুগে ক্ষুধিত চাষার স্বপ্ন
আটকে থেকেছে ; আলু, বেগুন, পটল, মুলোয় ।
অবশেষে, আবার একটা নতুন বছর এসেছে দোরে ।
শীতের ঝরাপাতা মাড়িয়ে
বহুকাল পেরিয়ে
নরম, মোলায়েম রোদ নিয়ে এই শীতের ভোরে ।
সমস্ত জড়তা কাটিয়ে দরজা খুলে দিই,
শীতের হিমেল পরশ
গায়ে মেখে নিই ।
শুনি, নরম আলোয় ভরা রঙিন দিন বলছে আমায়,
সাময়িক অবসর পেরিয়ে
কর্মতৎরতার দিন আগত ।
বলি, তাতেই রাজি,
নতুন বছর তুমি ‘স্বাগত’ ।
©রাজীব দাস 

খুঁজে নিও আমায় . . .

Posted on

মন কেমন বিকেলে হঠাৎ
যদি মনে পড়ে আমাকে
গোধূলির রঙে মেশা বকের পালকে,
খুঁজে নিও আমায়

ভ্রুযুগলের মাঝে ছোট্ট টিপের ছোঁয়ায়
যদি মনে পড়ে আমাকে
তোমার উপচে পরা চুলের ভাঁজে,
খুঁজে নিও আমায়

জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে গিয়ে
যদি মনে পড়ে আমাকে
ভেজা কার্ণিশের চুঁইয়ে পড়া জলের ফোঁটায়,
খুঁজে নিও আমায়
©রাজীব দাস

প্রথম চুম্বন 

Posted on Updated on

চোখের কোণে জমে থাকা মেঘ
বৃষ্টি ফোঁটায় গাল বেয়ে ঝরে
বেলাশেষে সন্ধ্যা নামে যখন
তোমার কথা বড্ড মনে পড়ে

মনে পড়ে প্রথম দিনের কথা
মনে পড়ে চোখের কাজলরেখা
চোখের কথারা অজানাই ছিল আগে
চোখেদের ভাষা তোমার কাছেই শেখা

আসলে তুমি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে
ভিজে শাড়ি লেপ্টে ছিল গায়ে
চোখ সরানো যাচ্ছিলো না চোখ থেকে
দেহের ওজন জমছিল দুই পায়ে

হঠাৎ পেলাম স্পর্শের অনুভূতি
ঠোঁটের সাথে ঠোঁট ছোঁয়ানোর সুখ
নিস্তব্ধ কিছু শীতল মুহূর্তরা
রাঙা হয়েছিল অবনত চিবুক

তোলপাড় বুক, রক্তিম দুটি কান
নত দৃষ্টি পায়ের আঙুল গোনে
প্রেমের ডাকে প্রেমিকের চিঠি গেল
জবাব এলো প্রেমিকার চুম্বনে

আসছে বছর আবার হবে

Posted on

রোদ বৃষ্টি, অনাসৃষ্টি
থাকেন পাশাপাশি
একদিকে মেঘ কাঁদে, অন্যদিকে
আকাশের মুখে হাসি

ভোরের বেলায়, শিউলিতলায়
আগমনির সুর
তুলোট মেঘ ওই নীল আকাশে
আনমনা দুপুর

দেখতে দেখতে দিন চলে যায়
রাত শেষ হয় ক্রমে
হাতির স্কন্ধে বিশ্বকর্মা
আসে মহাধুমধামে

আকাশে তখন ঘুড়ির মেলা
কেউ থাকে কেউ কাটে
দেখতে দেখতে আরও কয়েকটা
সুয্যি ডোবে পাটে

তারপর আসে মহালয়া, নিয়ে
গুরুগম্ভীর শ্লোক
উত্তেজনায় রাশ থাকে না
ঠাকুর দেখার ঝোঁক

ষষ্ঠীর বোধন থেকেই
আনন্দ, হইচই
একপলকে দশমী এল
মা যাচ্ছেন ওই

এত অপেক্ষা, এত আনন্দ
বিসর্জনেই শেষ
আসছে বছর আবার হবে
এমনটাই তো বেশ ।

©রাজীব দাস

পুজোর হাওয়া

Posted on

নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মত শরতের মেঘ আর বাতাসে একটা পুজো পুজো গন্ধ । বাঙালী মাত্রেই মনে মনে দিন গুনছে । দোকানে দোকানে কেনাকাটার প্রাচুর্য্য । কার ক-সেট তা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে আলোচনার অন্ত নেই । আদ্যিকালের সেই উন্মাদনা এখনো বজায় আছে । শুধু কলকাতা শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে ছেলেবেলায় দেখা কাশফুলগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । আজকে সেই বাঙালীর প্রেমের পুজোর অপেক্ষার কথাই বলি . . . . 

#
পুবের হাওয়া হৃদয়ে মোর দোল জাগিয়ে যায় ।
আজ বাতাসে মায়ের আসার আভাস খুঁজে পাই ॥
আগমনির সুর ওঠে ওই সারা ভুবন জুড়ে ।
মায়ের আসার সময় যে আজ ঘনিয়ে এলো ওরে ॥ 
সারা বছর তোমার আশায় ব্যাকুল দু-নয়ন ।
তুমি থাকলে আর কিছু যে নেইকো প্রয়োজন ॥
কাশফুলের ওই শুভ্র সাজে সাজছে পাড়া-গাঁ ।
বাঁধ না মানা এ খুশি শুধু তোমায় ঘিরেই মা ॥
আনন্দেরই বন্যা দেখ গ্রাম ও শহর জুড়ে ।
এইকটা দিন দুঃখগুলো থাকবে বহুদূরে ॥
নতুন জামা, পূজা মন্ডপ, অঞ্জলিরই ধুম ।
গভীর রাতে ঠাকুর দেখা চোখে বসে না ঘুম ॥
ভাবছি বসে জানলা ধরে আর তো কটা দিন ।
পুজোর আমেজ কোনদিনই হয় নাকো মলিন ॥

©রাজীব দাস 

সন্ত্রাস 

Posted on

‘সন্ত্রাস’ নামে আতঙ্কে আজ সমাজ গেছে ছেয়ে
ছুটছে জীবন, লুটছে সে ধন, আসছে মরণ ধেয়ে
চারদিকে আজ অশান্তির এই বহ্নিশিখা জ্বলে
সভ্য সমাজ যাচ্ছে ছেয়ে, কালকূট হলাহলে
যথাতথা আজ বোমাবাজি হয় রাত্রি-দুপুর-প্রাতে
সাধারণে আজ আইন তুলেছে নিজের নিজের হাতে
মানবিকতার পশুবলি হয় প্রকাশ্য দিবালোকে
হতভাগ্য তারাই যাঁদের বুক ফেটে যায় শোকে
সকালে করে যে বুক দুরু দুরু, বিকেলে করছে ভয়
কেন এই ত্রাস? যারা সন্ত্রাসবাদী,মানুষই কি তাঁরা নয় !
বাঘ তো কখনও বাঘকে খায় না ইতর প্রাণী হয়ে
তবে কেন মোরা স্বজাতির তরে সদাই থাকি ভয়ে
মানুষ হয়ে মানুষই যদি স্বজাতিকে মারে হায়
মানুষের সাথে ইতর প্রাণীর তফাৎ তবে কোথায় !

©রাজীব

বৃষ্টি

Posted on

হৃদমাঝারে বন্যা হবে বৃষ্টি তোরই জন্যে ।
মেঘলা আকাশ ‘বর’ যদি হয়, ঝোড়ো বাতাস ‘কন্যে’ ॥
ভাসছে রে দেখ কাগজের ওই নৌকো হৃদয় মাঝে ।
বুকের ভেতর মেঘ জমেছে, বজ্রনিনাদ বাজে ॥
নিন্মচাপের ঠ্যালায় মোদের উথালপাথাল প্রাণ ।
গঙ্গার বুকে একলা মাঝির উদাস করা গান ॥
গরম গরম খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা পাতে ।
গরিব শিশু ভিজছে রে দেখ ঝড়বৃষ্টির রাতে ॥
মাথা গোঁজার ঠাঁই পায় না ফুটো ত্রিপলের তলে ।
বন্যা হলেও বৃষ্টিতে নয়, হবেই চোখের জলে ॥
অন্তঃপুরে ফুলবাবুরা বৃষ্টি দেখেন সুখে ।
হয়তো তাঁরা আমোদও পান গরিবের এই দুখে ॥
বৃষ্টি শুধু ধনীদের, সে তো মোদের জন্য নয় ।
বৃষ্টি ওদের ‘কবিতা’ আর আমাদের ‘প্রলয়’ ॥
©রাজীব দাস

জুঁই

Posted on

তোমার সৌরভে মন্দ্রিত কর আকাশ-বাতাস-ধরা,
রাত্তিরে তুমি ফুটে ওঠো সখী, প্রভাতে তুমি যে মরা ।
নিঝুম রাতের তারাদের দিকে মিটিমিটি তুমি চাও,
প্রভাতফেরীর কলতান তুমি শুনিতেই নাহি পাও ॥
কীটপতঙ্গ, না দেয় সঙ্গ, রাত্রের আবরণে,
শুধু আমি জানি, সেজে দুয়োরানী, কাঁদো অবগুণ্ঠনে ।
কোন আচার্য্য ? শুক্রাচার্য ! তার অভিশাপ লাগি,
ক্ষীণ আয়ু নিয়ে দিনে ঝরে যাও, রাতে ওঠো ফের জাগি ॥
অন্য সকলে জেগে ওঠে হেথা করে সূর্যস্নান,
কোন মহাপাপ করিলে গো তুমি, যা কখনও হয় না ম্লান !
পরিচয়হীন নও তবু তুমি, শোন গো ও দেবদাসী,
‘জুঁই’ ফুল নামে জানে গো তোমায় অধম জগৎবাসী ॥


রাজীব
২/৭/১২

ভিখিরির স্বপ্ন

Posted on

আমি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি ।
স্বপ্ন খাঁটি, নয়কো মেকি ॥

থাক না যতই জঠরজ্বালা,
          স্বপ্ন দেখতে দোষটা কোথায় ?
দেশ চালানোর ভারটি কাঁধে,
          অর্থনীতির চিন্তা মাথায় ॥
পলিটিক্সের ঘাঁতঘোঁত সব
          আমার একটি নখের ডগায় ।
আমার কাছে থাকতে আঙুল
          ওরা সবাই কলম বাগায় ॥
ওদের সবার সই গুলো সব
          আমার একটি ছাপের সামিল ।
জানি আমি বাংলা, হিন্দি
          ইনজিরি আর অল্প তামিল ॥
বিধানসভার প্রধান আমি
          নিত্যনতুন আইন করি ।
মসলিন এর বস্ত্র দেহে
          হাতে আমার সোনার ঘড়ি ॥
আশেপাশের পুলিশগুলো
          রোজ দুবেলা স্যালুট ঠোকে ।
দেশ যে যাবে প্রথম বিশ্বে
          রঙিন স্বপ্ন মোর দুচোখে ॥
বিধানসভার ব্যালকনিতে
          দাঁড়িয়ে আছি, সচিব সাথে ।
হঠাৎ দেখি সচিব, ওকি !
          দাঁড়ায় পাশে, গাল যে চাটে ॥
ঘুমটা হঠাৎ গেলই ভেঙে
          ঘর ভাসছে চাঁদের আলোয় ।
আমি আছি সেই আগের কালুই
          কেউ নেই যার কোন চুলোয় ॥
ত্রিপল ছাওয়া ঘর যে আমার
          ফুটো চালের তলায় বাঁচি ।
ফুটপাথেই যে ঘর-সংসার
          আধপেটাতে সুখেই আছি ॥
নির্বিঘ্নেই দাঁড়িয়ে ছিলাম
          দাঁড়িয়ে থাকা মাথায় ওঠে ।
হঠাৎ আমার খেয়াল হল,
          সচিব কেন গালটি চাটে !
সচিব কোথায় ! এ যে দেখি
          পাশের বাড়ির দিশি ‘ভোলু’ ।
নেড়ি কুত্তা সচিব কি হয়,
          যতই কেন হোক সে চালু !
‘ধ্যুৎ তেরিকা’, খিঁচড়ে গেল
          সুন্দর এই স্বপ্নটা মোর ।
চোখ কচলে উঠে দেখি
          পাখির গানে হচ্ছে যে ভোর ॥
বেরঙিন এই দিনের শেষে
          রঙিন স্বপ্নের চোখেই বসত ।
দুর্বিসহ জীবনে মোর
          এটুকুই যে বাঁচার রসদ ॥