প্রবন্ধ

ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ

Posted on Updated on

প্রবন্ধ ১১ই সেপ্টেম্বর ২০০১ – ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ও পেন্টাগনে হামলা9.11 headlines002

AA-11 (American Airlines Flight-11) এবং UA-175 (United Airlines Flight-175) দ্বারা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের North  ও  South Tower এ বিস্ফোরণ । AA-77 (American Airlines Flight-77) দ্বারা আঘাত হানা হয় মার্কিন সামরিক শক্তির প্রধান কার্যালয় পেন্টাগনে । ১৯ জঙ্গিসহ ২৯৭৭ জন নিহত ও ছয় সহস্রাধিক আহত । নাশকতার ইতিহাসে অন্যতম ভয়ঙ্কর ঘটনা । ‘আল-কায়দা’ জঙ্গিসংগঠনের দায় স্বীকার । সামনে আসে ওসামা-বিন-লাদেনের নাম ।

২৬-২৯ নভেম্বর ২০০৮ – মুম্বাই হামলাmumbaiattack-main

তাজ হোটেল , ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস সহ ছয়টি স্থানে হামলা । ৯ হামলাকারীসহ প্রায় ১৬৬ জন নিহত ও ছয় শতাধিক আহত । পাকিস্তানী জঙ্গি সংগঠন ‘লস্কর-ই-তইবা’ এর দশ জঙ্গির মধ্যে একমাত্র জীবিত হিসাবে ‘আজমল কাসভ’ ধরা পড়েন । ৭ই জানুয়ারি ২০০৯ পাকিস্তান স্বীকার করে নেয় ভারতে তাণ্ডব চালানো জঙ্গিরা পাকিস্তানের নাগরিক ছিল ।

৪ ডিসেম্বর ২০০৯ – মসজিদে হামলা , রাওয়ালপিন্ডি , পাকিস্তানshia attack on masjid (2)

শুক্রবারের নমাজ চলাকালীন হামলা । নিহত অন্তত ৪০ জন এবং আহত ৮০ জনের অধিক ।

২৮শে মে ২০১০ – মসজিদে হামলা , লাহোর , পাকিস্তান35+Killed+Taliban+Terrorists+Attack+Mosques+SuAhElD2Zd4l

জুম্মাবারের নমাজ আদায়কালে হামলায় অন্তত ৯৪ জন নিহত ও ১২০ জনেরও বেশি আহত হয় । আহম্মদিয়া গোষ্ঠীর দুটি মসজিদে হামলার দায় স্বীকার করে ‘তেহরিক-ই-তালিবান’ জঙ্গি গোষ্ঠী ।

২ অক্টোবর ২০১৪ – খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ড , বর্ধমান

bardawan.jpg
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত

দুই ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ জঙ্গি নিহত ও একজন আহত ।

১৩ই নভেম্বর ২০১৫ – প্যারিস হামলা , ফ্রান্স ।

gang_sized.jpg

‘সেন্ট ডেনিস’সহ প্যারিসের ছয় জায়গায় হামলা । ৭ জঙ্গিসহ ১৩০ জন নিহত (শুধু ‘বাতাক্লান থিয়েটারে’ ৮৯ জন নিহত) । আহত প্রায় ৩৬৮ যার মধ্যে ৮০-৯৯ জনের অবস্থা গুরুতর । ঘটনার দায় স্বীকার Islamic State of Iraq and the Leavant (ISIL) ।

pathankot-attack-pti_650x400_41451913096

২-৫ জানুয়ারি ২০১৬ – পাঠানকোট হামলা , পাঠানকোট , পাঞ্জাব

ভারতীয় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলা । প্রায় ৪-৬ জনের জঙ্গি হামলায় ১ সাধারন নাগরিকসহ ৭ জন সেনা জওয়ানের মৃত্যু । সমস্ত জঙ্গি খতম । ‘জঈস-ই-মহম্মদ’ জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত থাকার সন্দেহ । ইউনাইতেদ জিহাদ কাউন্সিলের দায় স্বীকার ।

IMG_20160603_172019৩রা জুন ২০১৬ তারিখের বাংলা সংবাদপত্র বর্তমানের একটা খবরে দেখলাম পুলিশের এসটিএফ এবং এনআইএ’র যৌথ দল কলকাতার উপকণ্ঠ মেটিয়াবুরুজের গুলজারাবাদ থেকে এনামুল মোল্লা নামক এক ব্যাক্তিকে হাবিবুল হক নামক এক সঙ্গীসমেত ১৫ই মার্চ গ্রেপ্তার করেছে । এনামুল হক ছিল এ রাজ্যে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জেহাদি নিয়োগের অন্যতম কর্তা । এনামুল ‘জামাত-উল-মুজাহিদিন (জুম)’ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য । তাদের হয়ে জুম যাবতীয় নাশকতা এবং গুপ্তহত্যা যে চালাচ্ছে , তা অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দাবিক’-এ স্বীকারও করেছে আইএস । এই জঙ্গিসংগঠনের সঙ্গে ভারতের অন্যতম জঙ্গি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এর যোগ আছে । এনামুল এ রাজ্যের কমপক্ষে ২৫ জন যুবককে ‘মগজধোলাই’ করে তাদের আইএস-এর প্রতি আগ্রহী করেছে । তার মধ্যে মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ার চারজন যুবক এতটাই প্রভাবিত হয়েছিল যে, তারা চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছেছে । আরও পাঁচশতাধিক ভারতীয় যুবক মানসিকভাবে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ।

এখানে উল্লিখিত ঘটনাসহ আরও অসংখ্য ঘটনা, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পিছনে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের হাতকে স্পষ্ট করেছে । এখন প্রশ্ন হল, কেন বিভিন্ন কার্যকলাপ একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে বারবার চিহ্নিত করছে ? কেন সমস্ত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পিছনে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের হাত থাকার প্রমান পাওয়া যাচ্ছে ? তারাও তো মানুষ । তারাও তো মাতৃগর্ভে জন্ম নেয়! তবে কেন তারা সহস্র মায়ের প্রাণ নেয়! একটা জলজ্যান্ত মানুষের মাথা কেটে নিতে একটুও হাত  কাঁপেনা তাদের? তবে কেন! কিসের এই ‘জেহাদ’! যা মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় । যা খালি করে দেয় সহস্র মায়ের কোল । যা অনাথ করে দেয় হাজার হাজার শিশুকে । ইসলাম কি এই অপরাধ করার অনুমতি দেয় ! তবে কি ইসলামই সন্ত্রাসের জনক ! কিন্তু ইসলাম তো তা বলে না ! ইসলাম জন্মলগ্ন থেকেই শান্তি ও সাম্যের পক্ষে । তবে? তবে কি বর্তমানে ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন ! তবে কি ইসলাম সন্ত্রাসকে আশ্রয় করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইছে ! কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার নিরিখে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা তো নেহাত কম নয় । তবে কেন ?

‘কেন?’ প্রশ্নটার বহর ছোট হলেও, ওজন নেহাত কম নয় । কেন কিছু মানুষ মানব সভ্যতার অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করছে !

৯/১১ এর ঘটনার পর পরই একটা কথা শোনা যেতে থাকে, ওসামা-বিন-লাদেন ও আল-কায়েদার উত্থানের পিছনে আমেরিকার হাত আছে । কিন্তু সময়ের সাথে তাদের সম্পর্কে চির ধরে তাই লাদেন তার মনিবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ।

২০১৫ সালের প্যারিস হামলার পরপরই একটি রুশ সংস্থা দাবী করে পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলির কিছু মুষ্টিমেয় সংস্থা গোপনে জঙ্গি সংগঠনগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করছে । রুশ সংস্থাটির বক্তব্য তদন্তসাপেক্ষ হলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে জঙ্গিসংগঠনগুলির অস্ত্র ও অর্থের উৎসটা বেশ রহস্যময় ।

kailash satyarthi.jpg
কৈলাস সত্যার্থী

সমস্ত রকমের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পিছনে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের হাত প্রকাশ্যে আসায় বর্তমানে বিশ্বের অমুসলিম মানুষেরা মুসলিমমাত্রই সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে । আমেরিকার মিনেসোটা প্রদেশের মিনিয়াপোলিশ শহর নিবাসী নোবেলজয়ী সমাজকর্মী কৈলাস সত্যার্থী এক সভায় বলেন,‘ইসলামের অর্থ শান্তি । কয়েকজন মুসলমান ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে তার ভিত্তিতে সার্বিকভাবে সমগ্র মুসলমান সমাজের ওপর বিরূপ মনোভাব দর্শানো কাম্য নয় ।’ তিনি আরও বলেন,‘কয়েকজন মুসলমান ধর্মকে অপব্যবহার করছে । তারা ধর্মের নাম করে গভীর মৌলবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটাচ্ছে, যুবকদের মাথায় জিহাদের বীজ বপন করছে । আইসিস ও জঙ্গিগোষ্ঠীরা ইসলামের নামে সন্ত্রাস চালাচ্ছে । ইসলাম মানে শান্তি । পবিত্র কোরানে শান্তির কথা এক জায়গায় নয়, একাধিক জায়গায় লেখা রয়েছে । কোরানে শান্তি, ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ।’

কথাগুলি সঠিক । কিছু মানুষের কুকর্মের শাস্তি সকল মানুষ পাবে এটা ঠিক নয় । যেমন রত্নাকরের পাপের ভাগ তার পিতা-মাতা-স্ত্রী-পুত্র নিতে রাজি হয়নি, তেমনই কিছু মানুষের অপরাধের দায় পুরো গোষ্ঠী নিতে অস্বীকার করবে তা বলাই বাহুল্য । কিন্তু তা বললে মানছে কে ! অতএব সন্ত্রাসবাদী তকমাপ্রদান । ফলে সন্দেহের তিরে বিদ্ধ হতে হয় প্রৌঢ় মকবুল থেকে সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা ইকবালকে । আমিনা খাতুন, রুবিনা বেগম, বাদ যায় না তারাও । কিন্তু প্রতিরোধ যাদের বিরুদ্ধে, তারা অপরাধ করে চলে অবাধে । তারা বাংলাদেশে মুক্তমনা ব্লগার খুন করে, তারা সিরিয়ায় অসহায় নারীদের যৌনদাসী বানিয়ে তাদের উপর বর্বরোচিত অত্যাচার করে, তারপর তাদের পণ্যদ্রব্যের মত বিক্রি করে দেয় । তারা সমাজের শত্রু, মানবজাতির শত্রু, সভ্যতার শত্রু । তারা সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের শত্রু । তারা কোন জাতি, কোন ধর্মের প্রতিনিধি নয় । কারণ সন্ত্রাসবাদের কোন রং হয় না, কোন জাত হয় না । বর্তমানে নিজেদের মধ্যে বিবাদ মুলতুবি রেখে বিশ্বের সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলির উচিৎ সমবেতভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করা । পৃথিবীর বুক থেকে সন্ত্রাসবাদ নামক মহামারীকে মুছে দেওয়া ।

[আই.এস. দাবী করেছিল ইরাকের ২৮০০ বছরের পুরনো নবু মন্দির ধ্বংস করেছে তারা । ৩ জুনে উপগ্রহে ধরা পড়েছে সেই চিত্র । উত্তর ইরাকের প্রাচীন আসিরীয় শহর নিমরুদে এই ঐতিহাসিক নবু মন্দির । ব্যাবিলনের জ্ঞানের দেবতার পূজা হত এখানে । আই.এসের এক জিহাদির দাবী এবার বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য মিশরের পিরামিড ও স্ফিংক্স তাদের টার্গেট ।]

উৎস –

  • সন্ত্রাসবাদ/শুভাশীষ গুপ্ত.-কলকাতা :পশ্চিমবঙ্গ সাব-অর্ডিনেট ইঞ্জিনিয়ারি এ্যাসোসিয়েশন,২০০৯
  • ৩ জুন, বর্তমান (বাংলা সংবাদপত্র, কলকাতা থেকে প্রকাশিত)
  • ৯ জুন, দৈনিক স্টেট্‌সম্যান (বাংলা সংবাদপত্র, কলকাতা থেকে প্রকাশিত)
  • ৯ জুন, আনন্দবাজার পত্রিকা (বাংলা সংবাদপত্র, কলকাতা থেকে প্রকাশিত)
  • ফেসবুক
  • উইকিপিডিয়া

[দৃষ্টিভঙ্গি আমার নিজস্ব এবং মতামত একান্ত ব্যাক্তিগত । এই বিষয়ে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করলে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।]