এলোমেলো

মেরি ক্রিসমাস 

Posted on

আবার শীত । আবার বড়দিন । আবার সেন্ট জেমস্ চার্চ । উঁচু উঁচু খিলান, গম্বুজগুলো মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোর ছটায় উদ্ভাসিত হয়ে আছে । বিশাল উঁচু সিলিংয়ের কোনগুলোতে অন্ধকার জমাট বাঁধছে । কমপক্ষে শ-দেড়েক আসনের প্রায় সবগুলোই ভর্তি থাকা সত্ত্বেও গির্জার অন্দরে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছে । গির্জার ধর্মানুষ্ঠান সম্পন্ন হচ্ছে একে একে । শীতটা এবছর এই প্রথম একটু কাঁপুনি ধরাচ্ছে । ইতস্তত হাঁচি-কাশির আওয়াজ ভেসে আসছে । চার্চ বিশপের নাতিদীর্ঘ বক্তৃতার পর সুর করে গাইলাম ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ । অদ্ভুত সুর, শুনলেই ভাল লাগে । মনটা শান্ত হয়ে যায় । এই প্রথম সুরে সুর মেলালাম । হঠাৎ গির্জার ঘড়িতে বারোটার ঘন্টা শোনা গেল । অতঃপর পরস্পর পরস্পরকে ‘মেরি ক্রিসমাস’ জানানো হল । সঙ্গে নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা । 

ডাকঘর 

Posted on

একটা কাজে আজ সকালে ডাকঘরে যেতে হয়েছিল । দেখতে পেলাম আজকের ডাকব্যবস্থার অবস্থা । প্রাচীন থেকে বর্তমানে আসার পথে অনেককিছু পরিবর্তিত হয়েছে । পরিবর্তন এসেছে জীবনে, জীবনযাপনে । পরিবর্তন এসেছে কাজে, কাজের ধরনে । আজকের ডাকব্যবস্থাও অনেক খোলস পাল্টে অনেক নতুন পরিষেবা, অনেক নতুন নিয়মনীতির উদ্ভব ঘটিয়ে আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে । লম্বা লাইনের সামনে কাউন্টারের ওপারে বসা ডাকঘরের কর্মীরা কাজে ব্যাস্ত । আমিও দাঁড়ালাম লাইনের শেষে । হঠাৎ ডানদিকে তাকাতে চোখে পড়ল মান্ধাতার আমলের খোপ খোপ টেবিল মুখবন্ধ খামে চিঠির বোঝা নিয়ে নিশ্চুপ বসে আছে । কিছু লোক কাজ করছে, কিন্তু তাদের শারীরিক ভঙ্গি দেখে কাজের থেকে অকাজ বেশি করছে বলেই যেন বোধ হল । বিভিন্ন ধরনের কাগজের স্তূপ । কোনটা চাকরিপ্রার্থীর চিঠি, কোনটা সরকারি দপ্তরের চিঠি, কোনটা বা বিশেষ বিভাগীয় চিঠি । আছে মানি অর্ডার, আছে পত্র-পত্রিকা । পার্সেলগুলো ঘরের কোণে স্তূপীকৃত । কোনটাতে হয়তো বইপত্র, কোনটাতে ওষুধ, কোনটাতে বা অন্যকিছু । এখন মোবাইল-ফেসবুকের যুগে খবরাখবর নিতে চিঠি প্রেরিত হয় না । কিন্তু আগে হত । বিকেলের ডাকে প্রেমিকের চিঠি এসে পৌঁছত সারাবেলা হাপিত্যেস করে বসে থাকা প্রেমিকার হাতে, যুদ্ধের ময়দান থেকে একমাত্র ছেলের স্বহস্তে লেখা চিঠি পড়ে শান্তি পেত মায়ের মন, কিংবা জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তাসহ একটা পোস্টকার্ড পৌঁছে যেত নির্দিষ্ট ঠিকানায় । ওই মুখবন্ধ খামগুলোর মধ্যে ভরা থাকতো কতশত অশ্রু, ভালবাসা, সুখ-দুঃখের কথা । কত জীবনের ওঠা-পড়ার গল্প, কত প্রেম বিনিময়, কত নিভৃত আলাপচারিতা । ওই খামগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকতো কত না জানি রহস্য । কিন্তু আজ তারা মুখ লুকিয়েছে ফেসবুকের দেওয়ালের পিছনে । এখন তারা চাপা পড়েছে ওয়াটস্ অ্যাপের স্টেটাস এর তলায় । সেইসময় এই ডাকঘরেই জমা হত খামভর্তি সুখ-দুঃখ, এখানেই হাতবদল হওয়ার অপেক্ষায় থাকতো বাক্সভর্তি হাসি-কান্নারা । আজ সেখানে শ্মশানের নিস্তব্ধতা । একটা খাম আরেকটা খামের খবর জানতে চায় না । একটা চিঠি জিজ্ঞেস করে না আরেকটা চিঠির গন্তব্য । আজ তারা নিষ্প্রাণ পড়ে আছে টেবিলের খোপে ।
কয়েকটা বই পার্সেল করার ছিল । স্পীড পোস্ট করে দিয়ে যখন বাইরে এসে দাঁড়ালাম তখন শীতের বেলায় রোদের তেজ খানিক ম্রিয়মান । এরকমই কোন বিকেলে হয়তো অপেক্ষারত প্রেমিকার কাছে পৌঁছে গেছিল প্রেমিকের খবর । হয়তো . . . . . . . ! বাড়ির পথে পা বাড়ালাম । 

আমি

Posted on

আমি অনেকটা গঙ্গার মত ।
যেমন পবিত্র, তেমনই কলুষিত . . .

উত্তরের ডাক

Posted on

জানলা খুলতেই ভোরের প্রথম আলোর সঙ্গে ঝাঁপিয়ে ঢুকে পড়া একরাশ শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়ায় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো । আদুর গায়ে চাদরটা জড়িয়ে নিয়ে ঘুম চোখে খানিক্ষণ বাইরে চেয়ে রইলাম । শীত কি এল তবে ! কিন্তু তা কি করে হয় ! এত অনাড়ম্বর আগমণ হতে পারে না । শোবার সময় লেপ কম্বলের প্রয়োজন পড়ছে না । রাস্তাঘাটে লোকজনের সঙ্গে শাল-সোয়েটারের প্রেম দেখা যাচ্ছে না । বাঙালীর বিখ্যাত হনুমান টুপি তোরঙ্গের কাপড়ের ভাঁজে শান্তির ঘুমে তলিয়ে আছে এখনও । তবে এ শীতের আগমন নয় নিশ্চই । চোখ বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করলাম হাওয়াদের ফিসফিসানি । হাওয়ারা বলে গেল, তিনি আসছেন । বেশি বিলম্ব নেই, অপেক্ষার নিরসন হবে শীঘ্রই । এ হল হাওয়াদের বয়ে আনা উত্তরের সংবাদ । আট-নয় মাস বাদে মনে পড়ল অবশেষে । মাঝে প্রচন্ড বৃষ্টির রাতে খবর পাঠিয়েছিল একবার । তারপর আবার সব শান্ত । সব চুপকথাদের মুখ ফুটেছে এবার । বুঝলাম এ আর কিছু নয়, এ হল উত্তরের ডাক ।

সেইসব অন্ধকার

Posted on Updated on

শৌভিকদা গলা খাটো করে বললেন,’দাসবাবু পুলিশের লোক । সাবধানে কথা বলিস ।’
‘কিন্তু আমার মাইনেটা . . .’, রাজু কথাটা শেষ করতে পারে না ।
‘আরে এসব লাইনে একটু ধৈর্য ধরতে হয় । অত অধৈর্য হলে চলে না’, শৌভিকদা পরামর্শ দেন ।
‘অভাবের সংসার । ভেবেছিলাম এবার পুজোয় মাকে একটা শাড়ি . . .’ এবারেও কথাটা শেষ করতে পারে না রাজু ।
‘আহ্ , মাইনেটা হলেই দিয়ে দিস । পুজোতেই দিতে হবে এমন তো কোন নিয়ম নেই’, শৌভিকদা পরামর্শ দেয় ।
রাজুর মনের মধ্যে মায়ের মলিন শাড়িটা ভেসে ওঠে । শত কষ্টের মধ্যেও ছেলের সামনে মেলে ধরা অম্লান হাসিটাও । কিন্তু রাজু এখন বড় হয়েছে । মায়ের মুখের ওই অমলিন হাসিটুকুর পিছনে লুকিয়ে রাখা কষ্টটা এখন আর নজর এড়ায় না । রাজু অস্ফুটে বলে,’উনি বলেছিলেন আজ দেবেন ।’
‘বলেছিলেন ! ঠিক আছে কথা বলে দেখ তবে । আস্তে আস্তে কথা বলবি কিন্তু ।’, শৌভিকদা আবার সাবধান করে দেন ।
রাজু ভেবে পায় না দাসবাবু পুলিশের বড়কর্তা হওয়ায় ওর ভয়টা কিসের ! ও তো কোন অপরাধ করেনি । তবু শৌভিকদার সাবধানবাণী মনে রেখে নম্বর ডায়াল করে ।
‘হ্যালো, স্যার আমি রাজু । স্যার আমি অফিসে অপেক্ষা করছি । আপনি বলেছিলেন . . .’
ওপাশে কণ্ঠস্বর কথা শেষ করতে দিল না,’আজ একটু ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি । আমি দেখছি কাল বা পরশু দেওয়া যায় কিনা ।’
‘স্যার সামনে পুজো । আজ কুড়ি তারিখ হয়ে গেল । ও-মাসের টাকাটা এখনো . . .’
‘ঠিক আছে ঠিক আছে । দেখছি দেখছি ।’ লাইনটা কেটে গেল ।
শৌভিকদা জানতে চাইলেন,’কিরে ! কি বললেন ?’
কোন কথা না বলে রাজু অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো । শরতের আকাশে নীলের সাথে গোধূলির লাল মিশে গেছে । যেন শিল্পীর প্যালেটে রঙের মিশেল । সন্ধ্যে নামতে এখনো খানিক বাকি আছে । কিন্তু রাজুর মনের মধ্যে সন্ধ্যে নেমেছে অনেক্ষণ । পুজোর সাজে সেজে ওঠা কলকাতার আলোর রোশনাই এ আঁধার দূর করতে অক্ষম ।

আমি আর আমার ছবি আঁকা . . .

Posted on Updated on

চিত্রকলার ইতিহাস বোধ হয় অন্য সমস্তকিছুর থেকে পুরনো । মানুষ যখন সভ্য সমাজবদ্ধ হয়নি, সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের আদিম মানুষই পৃথিবীর প্রথম শিল্পী । বিশিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকদের মতে দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের ‘Chauvet cave’-এর গুহাচিত্রগুলি বিশ্বের সর্বপ্রথম মনুষ্যকৃত চিত্রকলা ।

 the Chauvet cave in France
the Chauvet cave in France

প্রায় ৩২০০০ বছর আগে তৈরি । বিশেষজ্ঞদের একাংশের আবার মত স্পেনের ‘Nerja cave’-এর গুহাচিত্রগুলি আরও পুরনো, প্রায় ৪২০০০ বছর আগের ।

Cave of Nerja, in Málaga, Spain.
Cave of Nerja, in Málaga, Spain.

এ তো গেল গুহাচিত্রর প্রসঙ্গ । এবার আসি পোর্ট্রেট প্রসঙ্গে । চিত্রকলার অনেক ধরনের মধ্যে এক ধরণ হলো পোর্ট্রেট বা প্রতিকৃতি অঙ্কন । পোর্ট্রেটে প্রধানত যার ছবি আঁকা হচ্ছে তার মুখ এবং সেই মুখে খেলে বেড়ানো সূক্ষাতিসূক্ষ অভিব্যক্তিগুলো ধরা হয় । পোর্ট্রেটের ইতিহাস নেহাত নতুন নয় । প্রায় খ্রিস্টপূর্বাব্দ পঁচিশ শতকে মিশরে প্রথম পোর্ট্রেট তৈরির ব্যবস্থা চালু হয় । তখনকার সময়ে শুধুমাত্র মার্বেল পাথর, ব্রোঞ্জ বা অন্য কোন ধাতুর সাহায্যে প্রতিকৃতি প্রস্তুত করা হত । টাকার বিনিময়ে শিল্পীরা আবক্ষমূর্তি প্রস্তুত করে দিতেন । তখনকার দিনে এমন পোর্ট্রেট তৈরি করাতেন কোন রাজা-মহারাজা, ফ্যারাও অথবা কোন অভিজাত ব্যক্তিরা ।

Menkaure and his queen
Menkaure and his queen

ফ্যারাও ‘মেনকাউরে’ এবং তাঁর স্ত্রীর আবক্ষমূর্তিই পোর্ট্রেট এর ইতিহাসে সবথেকে পুরনো বলে ধরা হয় (প্রায় ২৪৭০ খ্রিঃপূঃ) । পাশাপাশি তৎকালীন রোম ও গ্রীসেও পোর্ট্রেট তৈরির ব্যবস্থা চালু ছিল ।
প্রথমদিকে পোর্ট্রেট তৈরি হতো হয় কোন রাজা-মহারাজার অথবা মাইথোলজি বা পুরাণ বর্ণিত কোন কাল্পনিক দেবদেবীর । চিত্রশিল্পে প্রথম সাধারণ মানুষের পোর্ট্রেট তৈরি করেন সম্ভবত ‘গিয়োটো’ ।

Frescoes in Scrovegni Chapel by Giotto
Frescoes in Scrovegni Chapel by Giotto

১৩০৫ সালে তার তৈরি ইতালির ভেনেটোর অন্তর্গত পাদুয়ার ‘স্ক্রোভ্যাগনি চ্যাপেলের'(এরিনা চ্যাপেল) দেয়ালচিত্র আজও পাশ্চাত্য শিল্পকলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ ।

Portrait of Charles VII of France by Jean Fouquet (1445-50)
Portrait of Charles VII of France by Jean Fouquet (1445-50)

‘জাঁ ফুকেত’ এর আঁকা ফ্রান্সের রাজা ‘সপ্তম চার্লসের’ পোর্ট্রেটটি (১৪৪৫-৫০) এখনো পর্যন্ত সর্বোৎকৃষ্ট তৈলচিত্রর মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয় ।
১৪৫০ সালের পরে উদ্ভাবিত ‘চিয়ারুস্কুরো’ এবং ‘স্ফুমাতো’ নামক আলো-ছায়া ফুটিয়ে তোলার দুটি কায়দা পোর্ট্রেটকে আরও উন্নত করে তুলতে সাহায্য করে । ‘চিয়ারুস্কুরো’ টেকনিকটি ব্যবহারের সর্বোত্তম উদাহরণ বিশ্ববিখ্যাত পোর্ট্রেট ‘মোনালিসা’ ।

Mona Lisa by Leonardo da Vinci (1503)
Mona Lisa by Leonardo da Vinci (1503)

লিওনার্দো-দা-ভিঞ্চি সেইসময় এই কায়দাটি ব্যবহার করেছিলেন ।
এবার যদি শুধুমাত্র পেন্সিল স্কেচের কথা বলি, তাও প্রায় দুশো বছরের পুরনো ইতিহাস । সম্ভবত পেন্সিল স্কেচ প্রথম করেন ‘জাঁ অগিস্ট ডমিনিক আয়েঙ্গা’ । ১৮০৮ সালে তাঁর আঁকা ‘মাদাম গুইলাউমে গুইলোন লিথিয়েরে’-র পোর্ট্রেট সম্ভবত প্রথম লেড পেন্সিলে আঁকা প্রতিকৃতি বলে ধরা হয় ।

Portrait of Madame Guillaume Guillon Lethière by Jean Auguste Dominique Ingres (1808)
Portrait of Madame Guillaume Guillon Lethière by Jean Auguste Dominique Ingres (1808)

বর্তমানে ভিঞ্চি-রেমব্র্যান্ট-পিকাসোর মতো শিল্পীর অভাব দেখা দিলেও চিত্রশিল্পের ট্র্যাডিশন অবলুপ্ত হয়নি ।

আমার ছবি আঁকা
চিত্রকলার প্রতি ঝোঁক আমার চিরকাল । তাই ছোট থেকেই ছবি আঁকা বিষয়টি আমার কাছে বেশ আনন্দদায়ক । খুব ছোটবেলার কথা অবশ্য স্পষ্ট মনে নেই । মনে রাখার প্রথম ছবি এঁকেছিলাম আমার ৭-৮ বছর বয়সে । সেটা আদতে ছিল একটা দেওয়ালচিত্র । সিমেন্টের পলেস্তারা করা দেওয়ালে খড়ি দিয়ে এঁকেছিলাম অর্জুনের অস্ত্রশিক্ষা । দ্রোণাচার্যর সম্মুখে পাণ্ডব ও কৌরবপক্ষের সমস্ত ভাইয়েরা উপস্থিত । অর্জুনের হাতে গান্ডীব, চোখ পাখির চোখে । সামনের ঘরের দেওয়ালে হওয়ায় বাড়িতে কেউ এলেই তাঁর চোখে পড়ে যেত আর একটা ৭-৮ বছরের ছেলের কীর্তি শুনে কেউই প্রশংসা করতে কার্পণ্য করতেন না । কেউ কেউ আবার একধাপ এগিয়ে আমায় কোন আঁকার ইস্কুলে ভর্তি করে দেবার পরামর্শ দিতেন । যদিও তা আর হয়ে ওঠেনি । নিন্মবিত্ত পরিবারে গ্যাটের কড়ি খরচ করে আঁকা শেখাটা বিলাসিতার আরেক নাম মাত্র । পরে অবশ্য বড় হয়ে নিজের তাগিদে ভর্তি হতে পারতাম । কিন্তু আলস্য বড় বালাই ।

The Tree
The Tree

 

Portrait of Rani Mukherjee
Portrait of Rani Mukherjee

 

Lamentation over the Dead Christ (Botticelli, Milan), 1490-95
Lamentation over the Dead Christ (Botticelli, Milan), 1490-95

 

Light and Shade
Light and Shade

 

Portrait of Albert Einstein
Portrait of Albert Einstein

 

Portrait of  Osama-Bin-Laden
Portrait of Osama-Bin-Laden

 

Rabindranath (Before & After)
Rabindranath (Before & After)

ক্লাস টুয়েলভে পড়াকালীন জল রং করা শেখার জন্য এক জায়গায় ভর্তি হয়ে যাই । সপ্তাহে একদিন ক্লাস । মাস দু-তিনেক পরে মন বসাতে না পেরে ছেড়ে দিই । তারপর আর হয়নি । ক্লাস চলাকালীন আঁকা কিছু নমুনা . . .

The Girl
The Girl

 

The Village
The Village

 

The Girl-2
The Girl-2

 

The Girl-3
The Girl-3

 

The Mother
The Mother

 

Birthday
Birthday

 

Victory Gunner
Victory Gunner

 

20170906_184549
Tulips

বর্তমানে আঁকাআঁকির পরিমাণ অনেক কমে গেলেও একবারে জলাঞ্জলি দিইনি । কয়েকদিন আগেই একটা কাজ শেষ করলাম । তারই কয়েক ঝলক রইলো নিচে ।

Steps
Steps
The artist with his art
The artist with his art

নিঃসঙ্গ সি.এফ.এল.

Posted on Updated on

শিশিরের শব্দের মত সন্ধ্যা এনেছিলেন জীবনানন্দ । কিন্তু এ সন্ধ্যা শিশিরের শব্দের মত আসে না । ডানা থেকে রৌদ্রের গন্ধ ঝেড়ে ফেলবার জন্য থাকে না কোন চিল । এ সন্ধ্যা নামে ঝিঁ ঝিঁ পোকার একঘেয়ে চিৎকারে । এ সন্ধ্যা নামে শহর থেকে বহু দূরে কোন গ্রামে । এ সন্ধ্যা নামে মেঠো পথের ধূলি গায়ে মেখে । আর সেই সন্ধ্যার অন্ধকারে বিধবার নিঃসঙ্গতা বুকে নিয়ে লো ভোল্টেজে জ্বলতে থাকে একটা সি.এফ.এল । শহরের স্ট্রীট লাইটের চোখরাঙানি, বৈঠকখানার টিউবলাইটের অথবা মধ্যরাতের নিয়নের জলসার থেকে বহুদূরে মরা জ্যোৎস্নার মত জ্বলতে থাকে সি.এফ.এল.। কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামের ততধিক প্রত্যন্ত এক কোণে মনুষ্যবর্জিত ধূ ধূ মাঠের মাঝে একটা বাড়ি । সন্ধ্যা থেকেই ফটকের সামনে ঝুলতে থাকা সাদা বাতিটা টিমটিম করে জ্বলতে থাকে । তাতে অন্ধকার দূর হবার বদলে আরও জমাট বেঁধে যায় ।
বিধবার থানের ন্যায় সাদা আলো বিচ্ছুরণকারী সি.এফ.এল.এর চারিধারে গুনগুন করে বেড়ায় অগুনতি ক্ষুদ্র পোকারা । ওটুকু উৎপাত সহ্য করতেই হবে । সমাজে অমন পোকার অভাব নেই । এসব উৎপাত সহ্য করার আরেকটা কারণ হয়তো হতে পারে তাঁর অপার নিঃসঙ্গতা । স্বজাতির থেকে বহুদূরে সম্পূর্ণ একা নিঃসঙ্গ জীবন কাটানো সি.এফ.এল.এর কাছে এটুকুও অনেক । অনেকটা না হলেও খানিকটা তো বটেই । অন্তত নিঃসঙ্গতাটা খানিকটা হলেও ঘোঁচে । এসব সৌন্দর্য্য পিপাসু পোকার দল সন্ধ্যে হলেই এসে জোটে । প্রায় সারারাত গুনগুন..ফরফর..করে বেড়ায় । তারপর চাঁদের আলো যখন ম্লান হয়ে আসে, পুবের আকাশ ফর্সা হয়ে ওঠে, তখন বিদায় হয় পোকার দল । সি.এফ.এল. ও তাঁর সাজ বদলে সূর্যপ্রণাম সেরে শুতে যায় । দিনের আলোয় বিশ্রাম । আবার রাতের অভিসারের অপেক্ষায় ।
সারারাত আলো দিয়ে আকর্ষণই যার নেশা, সেও থাকে এক সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষের অপেক্ষায় । যার সাহায্যে সে ঘোঁচাতে পারবে তাঁর বৈধব্য । যে সন্ধ্যার বাতাস আলোড়িত করে ভালবাসবে তাঁকে । যার উদ্দাম প্রেমের জোয়ারে ভেসে যাবে নিঃসঙ্গ সি.এফ.এল.।
হঠাৎ বোঁ..ও..ও..ও…। এপাশ থেকে ওপাশ । একটু দূরে গিয়ে আবার ফিরে আসে । বোঁ..ও..ও..ও…। একটা কালো ভ্রমর । তাঁর পাখার ধাক্কায় আলোড়িত বাতাসে গুঞ্জনধ্বনি শোনা যাচ্ছে, বোঁ..ও..ও..ও…। সে চঞ্চল হরিণের মত ঘুরছে । এপাশ থেকে ওপাশ । তাঁর আগমনে অন্যান্য পোকাদের মধ্যে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে । তাঁর পাখার প্রচন্ড কম্পনের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত তাঁর শক্তির নমুনা দেখে অন্যান্য পোকারা একটু ব্যবধান রচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ।
প্রথমে খানিক ভয়, তারপর কৌতুহল এবং অবশেষে জন্ম নিল আকর্ষণ । ওই বুঝি এল তাঁর স্বপ্নের পুরুষ, তাঁর বৈধব্যযোগ ঘোঁচাতে । তাঁকে ভালবাসার জোয়ারে ভাসাতে । লো ভোল্টেজে নিভু নিভু ম্রিয়মান সি.এফ.এল.এর মনেও খানিক আশার আলো সঞ্চারিত হল যেন । ওই বুঝি তাঁর প্রাণভ্রমর । ওরই অপেক্ষায় হয়তো ছিল এতকাল । এবার বুঝি অপেক্ষার নিরসন হবে । নিঃসঙ্গ সি.এফ.এল.এর মনে আবার নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে দানা বাঁধতে লাগলো ।
হঠাৎ সি.এফ.এল.এর উজ্জ্বলতা যেন খানিকটা বেড়ে গেল । সেটা ভোল্টেজ বৃদ্ধির কারণে নাকি নিভে আসা প্রদীপে তেলের সঞ্চার হওয়ার ফলে, তা বলা মুশকিল । হয়তো আবার নতুন করে বাঁচতে চাওয়াই এই উজ্জ্বলতার কারণ !

©রাজীব দাস

বৃষ্টিভেজা ইচ্ছেরা

Posted on Updated on

একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেল । আবহাওয়া শীতল । গুটি গুটি ঘুম এসে উঁকি মারছে দরজার আড়ালে । নিস্তব্ধ পরিবেশ । ভিজে হাওয়া . . জোনাকির অক্লান্ত পরিশ্রম . . ঝিঁ ঝিঁ পোকার একঘেয়ে ডাক . . আর রাত্রের চাদর যখন মুড়ে রাখে . . তখন ভেতরের ঘুমন্ত অনুভূতিগুলো হঠাৎ জেগে উঠে উৎপাত শুরু করে দেয় । তখন ভেতরটা যেন কেমন খালি খালি লাগে । ইচ্ছে করে একটা ফাঁকা ছাদে তোর হাত ধরে ভিজতে । ইচ্ছে করে পাট ভাঙা ধবধবে পাঞ্জাবি পায়জামা পড়ে কফির মগ হাতে তোর পাসে বসে বৃষ্টি দেখতে । বারান্দায় বৃষ্টির ছাঁট এসে মেঝে ধুয়ে দিয়ে যাবে . . তোর মুখে অকারণ দুশ্চিন্তার ভান । তুই দরজাটা বন্ধ করতে যাবি । আমি এই সুযোগে তোর হাতটা টেনে ধরবো । তুই আচমকা বাধা পেয়ে চমকে যাবি । ইতিমধ্যে কখন তোর ভিজে চুল মুখের উপর এসে পড়েছে । আমি আলতো হাতে মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে কানের পাশে সাজিয়ে দেব । তারপর একছুটে চলে যাব বাইরে আর টাটকা একথোকা কামিনী ফুল হাতে ফিরে আসবো । থোকাটা গুঁজে দেব এলোমেলো জড়ানো খোঁপায় , আর তুই আমার পাগলামী দেখে হেসে উঠবি খিলখিল করে । আমি পাগলামী থামিয়ে অবাক হয়ে দেখবো তোকে । আমি দেখবো তোর কালো হরিণীর চোখ , গোছাভরা চুল , ছোট্ট চিবুক , ফর্সা গালে এঁকে দেওয়া পাতলা দুটি ঠোঁট , অগোছালো শাড়ি . . আরও কত কি । আমি দেখবো । দেখতেই থাকবো । তুই আমার দৃষ্টির সামনে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠবি । আশেপাশে কিছু না পেয়ে আমার বুকেই মাথা রেখে নিজেকে আড়াল করবি আমার দৃষ্টি থেকে । আর আমি আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপভোগ করবো তোর স্পর্শ ।

 

©রাজীব দাস