Latest Event Updates

দেবতার দেশ

Posted on Updated on

অনেকদিন পর আবার বেরিয়ে পড়া গেল । আবার পাহাড়, আবার হিমালয় । এবার আমাদের গন্তব্য ‘উত্তরাখণ্ড’ । সংস্কৃতে যার অর্থ ‘দেবভূমি’ বা ‘দেবতার দেশ’ ।
মার্চ মাসের সাত তারিখ । বেলা ১টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে ‘কুম্ভ এক্সপ্রেসে’ রওনা হওয়া গেল । অপরাপর নিম্নচাপ ও বৃষ্টিপাতের জেরে কলকাতায় ঠান্ডার প্রকোপ পুনরায় ফিরে আসায় আবহাওয়া বেশ মনোরম ।

৮ই মার্চ ২০১৯
ঘড়িতে সময় বিকেল পাঁচটা । হরিদ্বার পৌঁছলাম অবশেষে । ₹১৫০ টাকার বিনিময়ে কুলি মারফৎ মালপত্র নিয়ে স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়ালাম । গাড়ি আগে থেকেই ঠিক করা ছিল । ঋষিকেশে থাকার ব্যবস্থা । যাওয়ার পথে ‘কংখল’-এ আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম দেখে যাওয়া হবে । মালপত্র বেঁধে নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম ।
চলেছি হরিদ্বার শহর দেখতে দেখতে । কত সাধু সন্ন্যাসীর, কত মহাপুরুষের পদধূলি পড়েছে এই স্থানে । পুরাণের চরিত্রদের এককালের আবাসভূমি এই শহর । মহাকাব্যের চরিত্রদের নিয়ে কত কিংবদন্তি এখানকার হাওয়ায় ভাসে এখনও । আর সেই কিংবদন্তিদের বাস্তব রূপ দিতে চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অজস্র মন্দির । বারাণসী বা বেনারসকে যদি ‘ঘাটের শহর (City of Ghats)’ বলা হয়, তবে হরিদ্বারকে ‘মন্দিরের শহর (City of Temples)’ বলা যায় অনায়াসে । তবে এখানেও ঘাটের সংখ্যা নেহাত কম নয় ।
শহরের যানজট কাটিয়ে আধঘন্টার মধ্যে আনন্দময়ী মার আশ্রমে এসে পড়লাম ।IMG-20190331-WA0000[1] আনন্দময়ী মা বা মা আনন্দময়ী হলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধিকা জিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৬ সালের ৩০ এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার ত্রিপুরার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খেওড়া গ্রামে । তার পিতা বিপিনবিহারী ভট্টাচার্য মুক্তানন্দ গিরি নামে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন । সেই সুত্রেই তার মধ্যেও খুব ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হয় । তার প্রকৃত নাম নির্মলাসুন্দরী দেবী । ১৯২৪ সালে স্বামী রমণীমোহন চক্রবর্তীর সঙ্গে ঢাকা আসেন এবং সিদ্ধেশ্বরীতে কালীমন্দির স্থাপন করেন । এই মন্দিরেই একদিন দিব্যভাবে মাতোয়ারা নির্মলা আনন্দময়ী মূর্তিতে প্রকাশিত হন এবং তখন থেকেই তার নাম হয় ‘আনন্দময়ী মা বা মা আনন্দময়ী’ । ১৯৩২ সালে আনন্দময়ী স্বামীর সঙ্গে উত্তরভারতের দেরাদুনে চলে আসেন । পরে এই কংখলেই ১৯৮২ সালের ২৭ আগস্ট তিনি দেহত্যাগ করেন । ভারত ও বাংলাদেশে তার নামে প্রায় ২৫টি আশ্রম,বিদ্যাপীঠ,হাসপাতাল ইত্যাদি আছে । ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার, সংগ্রহশালা ছেড়ে এগিয়ে গেলাম সমাধিক্ষেত্রের দিকে । শ্বেত পাথরের মন্দিরের আকারে গঠিত সমাধিক্ষেত্র ও সমগ্র প্রাঙ্গণ । সেইসঙ্গে সযত্নে রক্ষিত আছে মহীরুহের আকার নেওয়া সেই প্রাচীন রুদ্রাক্ষ গাছ ।
সমাধি চত্বরে বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে এবার হোটেলের পথে রওনা হয়ে পড়লাম । আমাদের প্রাথমিক আস্তানা ঋষিকেশের ‘গ্রীন হিলস কটেজ’ ।
হরিদ্বার থেকে ঋষিকেশ পৌনে একঘন্টার রাস্তা । হোটেল যখন পৌঁছলাম তখন আটটা বাজে । লছমনঝুলা রোডের উপর ছিমছাম তিনতলা গাঢ় সবুজ বাড়ি, গাছপালা সমৃদ্ধ একটা ছোট্ট বাগান আর একটা ছোট্ট পার্কিং লট নিয়ে এই হোটেল । বাগানে বিভিন্ন কেয়ারী করা গাছ । সুন্দর কাঠের চেয়ার-টেবিল পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা । পাশেই হোটেলের নিজস্ব রেস্তোরাঁ । সমস্ত জায়গাটাতে টুকরোটাকরা শিল্পের ছোঁয়া ছড়িয়ে আছে ।
কাঁচের দরজা ঠেলে রিসেপশনে এসে দাঁড়ালাম । পরিচয়পত্র দেখিয়ে রেজিস্টারে সই করে আমাদের কর্তব্য যথাযতভাবে পালন করলাম । এবার একজন স্টাফ আমাদের দোতলার একটি ঘর খুলে দিলেন । বড়সড় তিনজনের ব্যবস্থাসহ একটি ঘর । ঝাঁ চকচকে বাথরুম । পিছনের দরজা খুললেই ওপাশে একফালি ছাদ । সেখানে বেতের চেয়ার টেবিল পাতা আছে । ছাদে বসলে রাস্তার চলমান গাড়ি, আশপাশের দু-চারটে হোটেল আমাদের বাগানের খানিকটা অংশ আর গাছপালার ফাঁকে বেশ কিছুটা পাহাড় দেখা যায় । সুন্দর ঠান্ডা হাওয়া বইছে । আমরা মালপত্র সহ ঘরে এসে গেড়ে বসলাম ।
ভাল করে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম । ততক্ষণে ফোনে নিচে রেস্তরাঁয় এক প্লেট করে চিলি পনির আর চিলি পটেটো অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে । সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজও যুক্ত হল একটু পরে । সঙ্গে দুটো সোডার বোতলও আনতে বলা হয়েছে ।
স্ন্যাকস এসে গেল একটু পরেই । সঙ্গে সোডা । এবার স্যুটকেস থেকে বেরোল কলকাতা থেকে আনা একটা স্কচ হুইস্কির বোতল । জনি ওয়াকার, রেড লেবেল । সিঙ্গেল মল্ট । বন্ধুপ্রবর হিমাদ্রী তিনটে কাঁচের গেলাসে সুরা ও সোডার সঠিক অনুপাত নির্ণয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল । খনিকের মধ্যেই আমাদের হাতে যে পাত্রগুলো উঠে এল তার মধ্যে থেকে যেন সোনালী রঙের বিচ্ছুরণ ঘটছিল । একচুমুক দিয়েই গা টা কেমন পাক দিয়ে উঠল । আমার আবার তেমন অভ্যেস না থাকায়, মাঝেমধ্যে গলায় ঢাললে পরে মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে ক্রিয়া হবার একটা প্রবণতা আছে । অন্তত সম্ভাবনাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না । মশলা মাখানো একটা পনিরের টুকরো ক্যাপসিকামের সহিত মুখে ফেলে চোখ বন্ধ করে চিবুতে লাগলাম । আহঃ, তুলতুলে পনিরের টুকরোটা মুখের মধ্যে যেন মিলিয়ে গেল । আস্তে আস্তে প্লেটের খাদ্যসামগ্রী ও পাত্রের তরল উভয়েই যথাক্রমে নিঃশেষিত হল । সান্ধ্যভোজ সমাধা হতেই সাড়ে নটা বেজে গেল । ইতিমধ্যে রাতের খাবারের ডাক এসে গেল । পাহাড়ি এলাকা, বেশি রাত পর্যন্ত জাগা এখানকার রীতিবিরুদ্ধ । অবশ্য শুধু ঋষিকেশ বলে নয়, প্রায় সমস্ত পার্বত্য এলাকায় এই একই নিয়ম প্রচলিত । অতএব কিছু করার নেই । একবারে খাওয়ার উপর খাওয়া । উপরিপর সান্ধ্য এবং নৈশভোজ সমাধা করে, পাকস্থলীকে সাহায্য করার জন্য দুটো হজমোলার বড়ি মুখে ফেলে শুতে গেলাম ।

৯ই মার্চ ২০১৯
সকাল সকাল স্নান সেরে তৈরি হয়ে নিয়ে নিচে বাগানে চলে এলাম । ব্রেকফাস্টের অর্ডার দেওয়া হয়েছে । গাছের ফাঁক দিয়ে ফালি ফালি নরম রোদ এসে সমস্ত বাগানে ছড়িয়ে পড়ছে । বাতাসে হালকা শীত শীত ভাব । বাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা টেবিলগুলোতে বিদেশীদের প্রাদুর্ভাব । কেউ অত্যন্ত নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে, কেউ বা প্রকৃতির রসাস্বাদনে ব্যস্ত । পৃথিবীর বিভিন্ন কোনা থেকে তাঁরা এসেছেন আধ্যাত্বিকতার টানে । আমাদের প্রাতঃরাশ এসে গেল । বাটার টোস্ট আর স্পিনাচ ফিটা অমলেট । সঙ্গে ট্রিপল লেয়ার প্যানকেক । অনেক নতুন নতুন খাদ্যগ্রহণ করে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, কিন্তু পালংশাক দিয়ে অমলেট ! এখনও খাওয়া হয়নি । সেই ঝুলিতে একটা নতুন অভিজ্ঞতা জমা হল এবার ।
গাড়ি এসে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য । খেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম । গন্তব্য পরমার্থ নিকেতন । শহরের পাশে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী গঙ্গার অপরদিকে এই আশ্রম । আগেরদিনই হোটেলে আসার পথে রামঝুলা দেখেছিলাম । আজ আশ্রম যাবার পথে দেখলাম লছমনঝুলা । ঝুলা হল গঙ্গার উপরে ঝুলন্ত ব্রীজ । দেবতার দেশে ব্রীজও দেবতার নামেই নামাঙ্কিত । রাস্তায় আসার পথে দেখছিলাম অধিকাংশ হোটেল, আশ্রম, ধর্মশালা, যাত্রী আবাস দেবদেবীদের নামাঙ্কিত ।
আমরা যখন আশ্রম পৌঁছলাম তখন রোদ বেশ চড়া হয়ে গেছে । এখানকার আশ্রম, ঘাট এবং মন্দিরগুলোতে যেন দেশীয়দের থেকে বিদেশীদের ভীড় বেশি । যত্রতত্র তারা দেশীয়দের পোশাকে ঘুরছে, দেশীয়দের খাবার খাচ্ছে, ছবি তুলছে, কেনাকাটা করছে । গঙ্গার তীরে এই আশ্রমে কয়েকদিন আগেই আন্তর্জাতিক যোগ উৎসব সম্পন্ন হয়ে গেছে । আমরা ঘাটে গিয়ে বসলাম । গঙ্গা বয়ে চলেছেন । বরফশীতল নীল জল । গভীরতা খুবই কম কিন্তু স্রোত ভীষণ । ঘাটের ধার দিয়ে টানা শেকল লাগান আছে পুণ্যার্থীদের জন্য । পুণ্যস্নান করতে গিয়ে স্রোতের মুখে যাতে ভেসে না যান কেউ তার জন্য এই ব্যবস্থা । কলকাতায় গঙ্গা দেখেছি অজস্রবার, কিন্তু এখানে এসে যেন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে যে এটা সেই গঙ্গা । উৎসের কাছে এইস্থানে জলের বর্ণ নীলাভ । দেখলে, স্পর্শ করলে চোখ মন জুড়িয়ে যায় । ভক্তি চলে আসে অন্তরে, জোর করে আনতে হয় না । অথচ সমতলে সাগরে মিলিত হবার কাছে তার কি অবস্থা । অবস্থা না বলে দুরবস্থা বলাই শ্রেয় । শুনেছি গঙ্গায় স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায় । বুঝতে পারছি উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের কৃতকর্ম বুকে বয়ে নিয়ে যেতে যেতে মা গঙ্গা এখন ধুঁকছেন । কুসন্তানদের কুকর্ম নিজ বুকে টেনে নিয়ে তিনি নিজেই এখন কলুষিত হয়ে পড়েছেন ।
ঘাটের ধার দিয়ে একটা ছোট্ট মার্কেট চত্বর । নানারকম সামগ্রীর সম্ভার । কোন দোকানে রুদাক্ষ ও নানারকম পাথরের মালা, আংটিসহ অজস্র জিনিস, কোথাও বা এখানকার বানানো কাপড়ের সম্ভার, আবার কোথাও শীতবস্ত্র । কোনটা বা খাবার হোটেল ।
কিছু কেনাকাটা সেরে বেরিয়ে এলাম । মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়ে গেছে । গুগল ম্যাপে একটা রেস্তোরাঁ খুঁজে দেখে সেদিকেই ধাবিত হওয়া গেল ।
লছমন ঝুলার কাছাকাছি একটা গলিপথে লম্বা চওড়া সিঁড়ি নেমে গেছে । বেশ অনেকটা নেমে আসার পর ডানহাতে একটা ছোট্ট গুহাদ্বারের মত প্রবেশপথ দেখা গেল । দুধাপ সিঁড়ি নামতেই চোখে পড়ল কাঁচের দরজা । ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল । তার কয়েকটি কারণ আছে । প্রথমত ঢুকেই সামনে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে দ্বিপ্রহরের ক্ষুধা না মিটলেও মনের খিদে মিটে গেছিল । টানা খোলা ঝুলবারান্দা এবং তার রেলিঙের ওপাশে বিশাল খোলা জায়গা । বিস্তৃত পাহাড়, নিচে স্রোতস্বিনী গঙ্গা, সব মিলিয়ে শিল্পীর তুলির টানে আঁকা অপূর্ব ক্যানভাস । তার উপরে এই ক্যাফেতে বিদেশীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত । সারা ক্যাফেতে জনা চারেক কর্মচারী, জনা ছয়েক এদেশীয় অবাঙালি ও আমরা ছাড়া ক্যাফেতে উপস্থিত প্রায় জনা চল্লিশেক মানুষের সবাই লালমুখো সাহেব মেম । ছড়ানো ছিটানো বসার ব্যবস্থা । কিছু সোফা, কিছু চেয়ার আবার কিছু বা তাকিয়া সহ ডিভান । ক্যাফের সৃষ্টিকর্তা ইংরেজি ‘বিটলস্’ ব্যান্ডের থেকে ভীষণভাবে প্রভাবিত । তাই রেস্তোরাঁর নাম ‘বিটলস্ ক্যাফে’। সমগ্র ক্যাফেটেরিয়ায় বিটলসের ছবি, পোস্টার, কর্মকান্ডের উদাহরণ ছড়িয়ে আছে ।

১০ই মার্চ ২০১৯
Image result for mercury shiva lingam harihar ashramব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম হরিদ্বারের উদ্দেশ্যে । যাব কংখলে হরিহর আশ্রম । আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম বাঁহাতে রেখে দক্ষেশ্বর শিব মন্দির ডানদিকে ফেলে খানিকদূর গেলেই হরিহর আশ্রম । এই আশ্রমেও আনন্দময়ীর আশ্রমের মত রুদ্রাক্ষের গাছ আছে । এই আশ্রমের মূল বৈশিষ্ট্য হল এখানে স্থাপিত ১৫১ কিলো ওজনের খাঁটি পারদের শিবলিঙ্গ । প্রতিবছর প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় এখানেও ।
ঋষিকেশের দিকে রওনা দিলাম । বেলা হয়ে যাচ্ছে, একটা হোটেল খুঁজে বসতে হবে । যৌথভাবে গুগল এবং ড্রাইভারের সাহায্য নিয়ে একটা হোটেলে পৌঁছন গেল । ‘ডিভাইন রিসর্ট’ । একপাশে হোটেল, সামনে অনেকটা ছড়ানো ছাদ । তার উপরে ছোট আরেকটা ছাদ তৈরি করা হয়েছে । দুটি ছাদেই বসার ব্যবস্থা আছে । তিনদিক খোলা । বিস্তীর্ণ আকাশ, পাহাড়, নদীর দৃশ্য উন্মুক্ত । পরিবেশ অনবদ্য । এবার মেনু কার্ডের দিকে অগ্রসর হওয়া যাক । আমার কাছে অবশ্য পরিবেশ ছাড়া প্রায় সবই সমান । কারণ সবই নিরামিষ । অথচ নিরামিষ এর পদও বেশি নেই । পনির, আলু, পেঁয়াজ, ফুলকপি, পালংশাক এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্যাপসিকাম । এই হল কাঁচামালের নমুনা । একজন বাঙালির রসনার কাছে এখানকার বড় রেস্তোরাঁর রান্না বালখিল্যতার নিদর্শন । আমাদের মায়েরা এর থেকে অধিকতর সুস্বাদু রান্না করেন ।
যাই হোক রিস্ক না নিয়ে ধোসা অর্ডার দেওয়া হল । এই খাদ্যটি যেমন তেমন হলেও খাওয়া চলে । খাবার এল, কিন্তু যেমন আশা করা হয়েছিল তেমন নয় । ধোসা ঠান্ডা হয়ে গেছে, সঙ্গে চিরাচরিত নারকেলের চাটনি নেই । সম্বর ডালের বদলে একটা অদ্ভুত স্বাদবিশিষ্ট ঝোল তরকারি । মুখে তোলা দায় । কোনক্রমে ধোসাটা চিবিয়ে শুকনো মুখে এবং প্রায় খালি পেটে বিল মিটিয়ে হোটেলের মুণ্ডপাত করতে করতে উঠে আসতে হল । যাকগে সঙ্গে প্রচুর শুকনো খাবার আছে । একবেলা এদিক ওদিক করে হয়ে যাবে ।
এবার চললাম ত্রিবেণী ঘাটের দিকে । ঋষিকেশ এর এই ঘাটটি গঙ্গা আরতির জন্যে প্রসিদ্ধ । গঙ্গা এখানে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বয়ে চলেছে, যেন তিনটি বেণী । তাই এই ঘাট ত্রিবেণী ঘাট নামাঙ্কিত হয়েছে । এখানে নদীর গভীরতা বেশ কম হওয়ায় এবং জল অত্যন্ত পরিস্কার হওয়ায় নিচের পাথর পর্যন্ত দৃশ্যমান ।
ত্রিবেণী ঘাট বেশ লম্বা চওড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ঘাট । জুতো নির্দিষ্ট জায়গায় খুলে প্রবেশ করতে হয় ঘাট চত্বরে । সরু লম্বা কার্পেটের টুকরো সিঁড়ির উপর বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা হয়েছে । নদীর জলের দু-ধাপ উপরে একটা চওড়া চাতাল । সেখানে সারি দিয়ে লোহার চৌকি রাখা আছে । তার উপরে প্রাত্যহিক গঙ্গা আরতি এবং দেবী বন্দনার সরঞ্জাম । এর উপরে উঠেই অষ্টাত্তরশত প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আরতি সুসম্পন্ন হবে ।
আমরা জায়গা দেখে বসে পড়লাম । এখানে টাকার বিনিময়ে ব্যক্তিগতভাবে আরতি দেওয়া যায় । সাড়ে ছটা নাগাদ ভজনগীতির মাধ্যমে আরতি শুরু হল । বড় মনোরম সে দৃশ্য । এর আগে ইন্টারনেটে বেনারসের আরতির ছবি দেখেছিলাম । আগেরদিন হরিদ্বারে চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন হল । আজ এখানে দেখছি । প্রতি স্থানেই এই আরতির যেন একটা নিজস্বতা আছে । আরতি শেষে নিমকি সহযোগে চা খেয়ে হোটেলে ফিরলাম । পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে, সেই হেতু ব্যাগ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়া হল ।

১১ই মার্চ ২০১৯
সাতসকালে উঠে হাতমুখ ধুয়ে হোটেলের বিল মিটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । প্রাতঃরাশ করার সময় নেই । রাস্তায় কোথাও করে নেওয়া হবে । পাহাড়ি রাস্তায় চড়াই উৎরাই ভাঙতে ভাঙতে চলতে লাগলাম । একসময়ে দেবপ্রয়াগ এসে গেল ।20190311_112841[1] এই স্থানে ভাগীরথী আর অলকানন্দা মিলিত হয়েছে । সৃষ্টি হয়েছে গঙ্গার । এই স্থানে ভাগীরথী ওরফে গঙ্গা আমাদের সঙ্গ ত্যাগ করল । আমরা এগোতে লাগলাম অলকানন্দাকে সঙ্গিনী করে । কিছুদূর গিয়ে একটা পদের হোটেল দেখে পাকস্থলী জানান দিল এবার কিছু খাওয়ার দরকার । এখানে মেনুকার্ডে চোখ বুলিয়ে চোখের শান্তি হল । মেনুকার্ডের একটা অংশে ননভেজ লেখা এবং তার নিচে বেশ কিছু চিকেন দিয়ে শুরু হওয়া নাম দেখে প্রাণে জল এল । নাঃ, এখনও হতাশায় ডুবে যাওয়ার দিন আসেনি তবে ! যাকগে আমিষ উপকরণের নাম দেখেও যদিও আমরা তরকারি সহযোগে আলুর পরোটা এবং চা খেয়েই আবার গন্তব্যের দিকে রওনা দিলাম । আজ সারাদিনটা পথেই কাটবে আন্দাজ করতে পারছি । রুদ্রপ্রয়াগ এখনও চল্লিশ কিলোমিটার বাঁকি । আমাদের চালককে বলাই ছিল আমিষ পাওয়া যায় এমন কোন ধাবা দেখে গাড়ি দাঁড় করাতে । রাস্তার ধারে টিন দিয়ে ঘেরা একটা ঝুপড়ি মত দোকানে গাড়ি দাঁড়াল । দোকানের চেহারা দেখে ভক্তি হল না । জিজ্ঞেস করে দেখলাম মাছ এবং মাংস সবই পাওয়া যাবে । এতদিন নিরামিষ খাওয়ার পর মাছ এবং মাংস দুটোই পাওয়া যাবে শুনে আমরা যেন দিশেহারা হয়ে পড়লাম । প্রত্যেকের মাথা পিছু একপ্লেট করে মাছ-মাংস দুটোই অর্ডার দেওয়া হল । আমাদের চালক মাছ খায় না । ওর শুধু মাংস আর রুটি । খাবার এল খানিক পরে । খেয়ে দেখলাম স্বাদ মন্দ নয় । অলকানন্দা থেকে ধরে আনা ট্রাউটের মত একজাতীয় মাছ । সরু লম্বা, রূপোলী ছোট ছোট আঁশ । খেতে নরম । দোকান দেখে ভক্তি না হলেও খাবারটা খারাপ নয় । গুরুভোজন শেষে আবার যাত্রা শুরু করলাম । একসময় রুদ্রপ্রয়াগ চলে এল । এই স্থানে অলকানন্দা এবং মন্দাকিনী নদী মিলিত হয়েছে । দুটোই প্রবল স্রোতস্বিনী । রুদ্রপ্রয়াগকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম । রাস্তা অত্যন্ত খারাপ । আর দুমাস পরেই চারধাম যাত্রা শুরু হবে । সেই উপলক্ষ্যে রাস্তা চওড়া হচ্ছে । সমগ্র রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি এবং পাহাড় কেটে রাস্তা বের করার প্রক্রিয়া চলছে । এর ফলে জায়গায় জায়গায় থেমে যেতে হচ্ছে । কোথাও পনেরো কুড়ি মিনিট, কোথাওবা আধঘন্টারও বেশি । ২০১৩ সালে কেদারনাথে প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছিল । প্রচুর লোকের প্রাণহানি ঘটেছিল । প্রচুর লোক হয়েছিল ঘর ছাড়া । যে হারে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে আরেকটা বদ্রীনাথ বিপর্যয় হলে অবাক হব না । আজ রাতটা উখিমঠে থাকার কথা । আগামীকাল যোশীমঠ রওনা হব । উখীমঠ যখন পৌঁছলাম সূর্য তখন পাটে যেতে বসেছে । নির্দিষ্ট হোটেল খুঁজে বের করতে খানিক্ষণ সময় গেল । আমাদের আজ রাতের আস্তানাটি মূল বাজারে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের কাছে । আমরা চেক ইন করে মালপত্র নিয়ে যখন হোটেলে ঢুকে পড়লাম, বাইরে তখন টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে । সেইসঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে । রাত্রে তাপমাত্রা যে বেশ ভাল পরিমাণে কমবে তা বোঝা গেল । রুমহিটার না থাকলেও বিছানায় মোটা লেপ এবং বাথরুমে গিজার থাকায় খুব বেশি চিন্তিত হবার কারণ নেই । সারা শরীর ধূলিধূসরিত । লাগেজ ধূলোয় স্নান করে উঠেছে । হোটেলের আমাদের দেখা একমাত্র কর্মচারী পাহাড়ি ছোকরার কাছে একটা কাপড় চেয়ে নিয়ে নিজেই সাফ করে ফেললাম ব্যাগপত্র । গিজারে জল গরম করে করে মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেললাম । হাতমুখ ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ক্রিম লাগিয়ে কম্বলের তলায় সেঁধিয়ে গেলাম । চা বলা ছিল । চা আসতে রাতের খাবারের অর্ডার দিয়ে দেওয়া গেল । ধোঁয়া ওঠা চা আর আমাদের সঙ্গে আনা বিস্কুট দিয়ে চা পর্ব শেষ হল । সাড়ে নটার মধ্যে খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে । পরের দিনও সকাল সকাল বেরোনো । কলকাতায় সাড়ে নটায় শোবার কথা কল্পনাই করা যায় না । তবে এটা পাহাড় । এখানকার নিয়মকানুন আলাদা । রাত্রে গরম গরম রুটি পনির আর ডিমের ডালনা খেয়ে শয্যা নিলাম । বাইরে বৃষ্টি হয়ে চলেছে সমানে ।

১২ই মার্চ ২০১৯
সকালে ঘুম ভাঙলো কম্বলের ওম গায়ে জড়িয়ে । রাত্রে ঠিক করাই ছিল তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে । হাতমুখ ধুয়ে চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম । আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় বাইরে শীত বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে । রাস্তাঘাট এখনও ভিজে । মালপত্র গাড়িতে তুলে হোটেলের বিল মিটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । গন্তব্য যোশীমঠ । আবহাওয়া ঝকঝকে । নীল আকাশে সাদা তুলোর মত মেঘ চরে বেড়াচ্ছে । তার থেকেও সাদা বরফে ঢাকা পাহাড় চূড়া দেখা যাচ্ছে দূরে । প্রায় ঘন্টাখানেক চলার পর রাস্তার দুধারে বরফের প্রদর্শনী শুরু হল । এখানে ওখানে যেন সাজানো আছে বরফের ভাস্কর্য । আমরা দেখতে দেখতে এগোতে লাগলাম । যত এগোই তুষারের পরিমাণ তত বৃদ্ধি পেতে থাকে । আরও কিছুটা এগিয়ে একটা দোকান দেখে চা পানের উদ্দেশ্যে নেমে পড়লাম । জায়গার নাম বেনিয়াকুন্ড । চোপতা আর খানিক্ষণ এর রাস্তা । রাস্তাটা বাদ দিয়ে সারা প্রান্তর বরফে মোড়া । রাস্তা থেকে বরফ সরিয়ে সদ্য পরিস্কার করা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে । আমরা ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে তুলে নিলাম ।
খানিক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার রওনা হলাম । যত এগোচ্ছি বরফ তত বাড়ছে । এক জায়গায় আমাদের চালক হঠাৎ গাড়ি ধার ঘেঁসে দাঁড় করিয়ে দিলেন । ব্যাপারটা বুঝে উঠতে একটু সময় লাগলো । বুঝতে পারলাম যখন দেখলাম আমাদের সামনের গাড়িটি পিছলে নিচের দিকে নেমে এসে সামান্য গোত্তা খেয়ে বরফের দেওয়ালে ধাক্কা দিয়ে থেমে গেল । চালক জানিয়ে দিলেন এমন অবস্থায় আর এগোনো নিরাপদ নয় । রাস্তায় বরফের স্তর জমে আছে । গাড়ির চাকা পিছলে যাবে । আমরা এই কথা শুনে সবে একটু মুষড়ে পড়তে যাব, তক্ষুণি আমাদের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সেই পথেই একটা ক্রেন এসে হাজির । এই ক্রেনটিকেই আমরা কিছুক্ষণ আগে ওভারটেক করে এগিয়ে এসেছিলাম । ভাগ্য আজ পুরোপুরি আমাদের সহায় । নইলে আজ এখনই বা ওই কদাকার যানটি এই পথেই যাবেন কেন ! যাকগে, আমাদের কীর্তিকলাপ দেখে ইতিমধ্যে ক্রেনের চালক পরিস্থিতি আন্দাজ করে ফেলেছে । আমাদের পাশ কাটিয়ে তার বিকট দেহসৌষ্ঠব নিয়ে এগিয়ে গেল । কেটে চেঁচে বরফ তুলে ফেলে দিয়ে রাস্তা পরিস্কার করতে আমরা আবার চলা শুরু করলাম । খানিক বাদে আবার দুচারটে মোড় ঘুরে অবশেষে এসে পড়লাম চোপতা ।
ভারতের সুইটজারল্যান্ড । যেদিকে দুচোখ যায় শুধু বরফ আর বরফ । গাছের পাতার উপর চাপ চাপ ঝুরো বরফ জমে আছে । দেখে মনে হচ্ছে যেন গাছে গাছে বরফের ফুল ফুটেছে । রাস্তার ধারে বরফের ছয় সাত ফুট উঁচু প্রাচীর ঢালু হয়ে উঠে গেছে আরও উপরের দিকে । এখান থেকে তুঙ্গনাথ যাবার রাস্তা চলে গেছে । কেদারনাথ, তুঙ্গনাথ, রুদ্রনাথ, মদমহেশ্বর ও কল্পেশ্বর, এই হল পঞ্চকেদার । তুঙ্গনাথ হল পঞ্চকেদারের অন্যতম একটি । পর্যটকগণ গাড়ি করে চোপতা পর্যন্ত এসে ট্রেক করে তুঙ্গনাথ যেতে পারেন ।
ঘন্টাখানেক সময় কাটিয়ে, ম্যাগী সহযোগে চা খেয়ে আবার রওনা দেওয়া গেল । বেলা দ্বিপ্রহর । দিনের আলো থাকতে থাকতে যোশীমঠ পৌঁছতে পারলে খুবই ভাল হয় ।
উখিমঠ থেকে বেরোতে নটা বেজে গিয়েছিল । উখিমঠ থেকে যোশীমঠের দূরত্ব প্রায় একশো ত্রিশ কিলোমিটার । পাঁচটা নাগাদ যখন যোশীমঠ পৌঁছলাম সূর্য তখনও পাহাড়ের পিছনে মুখ লুকায়নি । আকাশে দিব্যি আলো আছে । সন্ধ্যে হতে তখনও কিছুটা সময় বাঁকি ।

১৩ই মার্চ ২০১৯
স্নান সেরে, গরম গরম লুচি আর কাবুলি ছোলার ঘুগনি খেয়ে রওনা দিলাম বহুপ্রার্থিত আরেক তুষাররাজ্য ‘আউলি’র দিকে । যোশীমঠ থেকে আউলির দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার । গাড়িতে পাহাড়ি পথে চড়াই ভেঙে উপরে উঠতে লাগলাম । আর্মি ক্যাম্প ছেড়ে যত এগোতে লাগলাম প্রকৃতি আরও রুক্ষ এবং শীতল হতে লাগলো । পথের ধারে বরফের দেখা পেতে লাগলাম । সংকীর্ণ রাস্তা এঁকেবেঁকে উঠে গেছে উপরে, আরও উপরে । গাড়ি থামলো স্কি রিসর্ট । এইখানে গাড়ির যাত্রা শেষ । এরপর কেবিলের মাধ্যমে উপরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা । ঝুলন্ত চেয়ারের বসিয়ে পর্যটকদের উপরে নিয়ে যাওয়া হয় । সর্বোচ্চ চারজন বসতে পারেন । মাথাপিছু যাতায়াত আজকের তারিখে ₹৫০০ । যারা এখানে স্কি করতে আসেন, মূলত তাদের জন্যেই এই ব্যবস্থা । এছাড়াও নিচে যোশীমঠ থেকে রোপওয়ে আছে পর্যটকদের ওপরে নিয়ে আসার জন্য । সর্বোচ্চ পঁচিশ জন এবং যাতায়াত মাথাপিছু ₹১১০০ (আজকের তারিখে) বিনিময়ে যাওয়া যায় তুষাররাজ্যের চূড়ায় । উভয় কেবল লিফটিংয়ের পরিচালনায় আছে গাড়োয়াল মন্ডল বিকাশ নিগম । সমগ্র উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গার মত এখানেও রাজ্য সরকারের গেস্ট হাউস আছে । আমরা বরফে চলার উপযুক্ত রবারের গামবুট ভাড়া নিয়ে পায়ে গলিয়ে টিকিট কেটে চেয়ার কারে গিয়ে বসলাম । চলা শুরু হতেই চেয়ার ধীরে ধীরে সামনের দিকে উপরে উঠতে লাগলো । চেয়ার যত উপরে উঠছে, বুকের ভেতর তত বেশি ধুকপুক করছে । উড়ন্ত পাখি নিচে তাকলে কেমন দেখবে তার খানিকটা আন্দাজ পাচ্ছিলাম । মিনিট পাঁচেকের সফর শেষে যখন উপরে শক্ত কংক্রিটের মেঝেতে পা রাখলাম তখনও বুকে মাদল বাজার শব্দ আর পেটের ভেতর ফড়িং-এর ওড়াউড়ি টের পাচ্ছিলাম । খানিকটা ধাতস্ত হয়ে প্রবেশ করলাম বরফরাজ্যে । উপরে টাকার বিনিময়ে স্কি করা, স্লেজ চড়ার ব্যবস্থা আছে । ছোট ছোট গুমটি দোকানে করে চা, কফি, ম্যাগী, পাকোড়া, রাজমা, চাউল ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে । দাম অবশ্যই সমতলের এবং সাধারণের থেকে বেশি । আর সেটাই স্বাভাবিক ।20190313_112704
সাগরে যেমন ঢেউয়ের পর ঢেউ জুড়ে এক অপরূপ শোভার সৃষ্টি করে এখানেও তেমন বরফের ঢেউ একের পর এক জুড়ে এক অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা করেছে । বিশাল ছড়ানো ভ্যালি সম্পূর্ণ বরফে ঢাকা । সামনে দিগন্ত বিস্তৃত নন্দাদেবীর বিস্তীর্ণ রেঞ্জ বরফের মুকুট পরে দাঁড়িয়ে আছে । আকাশ মেঘলা । নীলচে পর্বতের সারির ভাঁজে ভাঁজে মেঘেদের খেলা দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল । চার-পাঁচফুট পুরু বরফ, তার উপর এক-দেড়ফুটের পাতলা আস্তরণ । প্রতি পদক্ষেপে পায়ের নিচের দিকের সাত আট ইঞ্চি বরফের তলায় অদৃশ্য হচ্ছে । বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় খানিকদূর হাঁটাহাঁটি করতেই হাঁফ ধরে যাচ্ছে । ঠান্ডায় শরীরের খোলা অংশ অসাড় হয়ে যাচ্ছে । এই ঠান্ডায় একটু কড়া কফি হলে মন্দ হয় না । যেমন ভাবা তেমন কাজ । ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ চলে এল হাতে । কফির উষ্ণতাটা হাতে আরাম দিচ্ছিল বেশ । পরম আয়েশে কফির পাত্রে চুমুক দিলাম ।

১৭ই মার্চ রাতের ট্রেনে কলকাতার দিকে রওনা দেবার সময়ও স্মৃতির পাতা থেকে বরফের কুচি ঝরে পড়ছিল । ফিরে এসে কলকাতার প্যাচপ্যাচে গরমের কথা ভাবলেই গায়ে যেন জ্বর আসছিল । দেবতার দেশ দেবতারা সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছে । মানুষ সেই সাজানো সংসার ভাঙছে । খোদার ওপর খোদকারি আর প্রকৃতির সাথে বাটপারির পরিণাম যে কি হবে তা সময়ই বলবে ।

নতুন বছর

Posted on

নতুন বছরের নতুন দিন আমার সামনে দাঁড়িয়ে
দুটি হাত বাড়িয়ে ।
খ্রীষ্ট জন্মের দুহাজার সতেরো বছর পরে,
আবার একটা নতুন বছর
কালের হাত ধরে ।
পেরিয়ে সাত লক্ষ ছত্রিশ হাজার সাতশো আটটি রাত,
ওই শুনি দরজায় তার করাঘাত ।
এই বিপুল কালের ব্যবধানে এসেছেন কত মহামানব
তাদের কেউ ইতিহাসের পাতায় রেখেছেন অবদান
কাউকে মানুষ গেছে ভুলে, দেখেনি
তার হল নাকি অভিমান ।
অবশেষে তারা ডুব দিয়েছে,
মহাকালের অতল সাগরে ।
তাদের কাহিনী ফেরে লোকের মুখে মুখে
প্রান্তরে, নগরে ।
এসেছে প্রবল পরাক্রমী রাজা-মহারাজা
করেছে রাজত্ব,
অবশেষে তাদের বিজয় পতাকাও মিশেছে ধুলোয় ।
তবু, যুগে যুগে ক্ষুধিত চাষার স্বপ্ন
আটকে থেকেছে ; আলু, বেগুন, পটল, মুলোয় ।
অবশেষে, আবার একটা নতুন বছর এসেছে দোরে ।
শীতের ঝরাপাতা মাড়িয়ে
বহুকাল পেরিয়ে
নরম, মোলায়েম রোদ নিয়ে এই শীতের ভোরে ।
সমস্ত জড়তা কাটিয়ে দরজা খুলে দিই,
শীতের হিমেল পরশ
গায়ে মেখে নিই ।
শুনি, নরম আলোয় ভরা রঙিন দিন বলছে আমায়,
সাময়িক অবসর পেরিয়ে
কর্মতৎরতার দিন আগত ।
বলি, তাতেই রাজি,
নতুন বছর তুমি ‘স্বাগত’ ।
©রাজীব দাস 

#টাইগার_জিন্দা_হ্যায়

Posted on Updated on

কার্নিভাল সিনেমাতে এইমাত্র দেখে ফিরলাম ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ । আদ্যপান্ত অ্যাকশনে ভরপুর এই সিনেমা সলমন ভক্তদের তো বটেই, সলমন ভক্ত না হলেও অ্যাকশন সিনেমা পছন্দ করে এমন মোটামুটি সকলেরই ভাল লাগবে । ছবিতে টাইগারের চরিত্রে অভিনয় করা ‘সলমন’ বয়সের ভারে খানিকটা যেন ন্যুব্জ । তা সত্ত্বেও পর্দায় সলমনের উপস্থিতির মধ্যে একটা উন্মাদনা আছে, তাতেই দর্শককে কাত করার চেষ্টা । বুড়ো হাড়ে ভেলকি আর কি ! বাকি সবার অভিনয় ভাল । পরেশ রাওয়াল মানানসই । তবে ছবির আকর্ষণ অনেকটা বাড়িয়ে তুলেছে আবু উসমানের ভূমিকায় ‘সাজ্জাদ দেল-আফরুজ’ এর অনবদ্য অভিনয় । তার কথাবার্তা, চলাফেরা, চাহনির শীতলতা জঙ্গি নেতার চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছে । ছবির অ্যাকশন সিকোয়েন্স বেশ ভাল । আদ্যপান্ত বিদেশে শুটিং, হলিউডের ধাঁচের অ্যাকশন, বিদেশী কলাকুশলীদের উপস্থিতি ছবিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে । অ্যাকশন সিনেমা হিসেবে সফল এই সিনেমা দেখে আসতে পারেন সময় করে । ভাল লাগবে ।

মেরি ক্রিসমাস 

Posted on

আবার শীত । আবার বড়দিন । আবার সেন্ট জেমস্ চার্চ । উঁচু উঁচু খিলান, গম্বুজগুলো মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোর ছটায় উদ্ভাসিত হয়ে আছে । বিশাল উঁচু সিলিংয়ের কোনগুলোতে অন্ধকার জমাট বাঁধছে । কমপক্ষে শ-দেড়েক আসনের প্রায় সবগুলোই ভর্তি থাকা সত্ত্বেও গির্জার অন্দরে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছে । গির্জার ধর্মানুষ্ঠান সম্পন্ন হচ্ছে একে একে । শীতটা এবছর এই প্রথম একটু কাঁপুনি ধরাচ্ছে । ইতস্তত হাঁচি-কাশির আওয়াজ ভেসে আসছে । চার্চ বিশপের নাতিদীর্ঘ বক্তৃতার পর সুর করে গাইলাম ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ । অদ্ভুত সুর, শুনলেই ভাল লাগে । মনটা শান্ত হয়ে যায় । এই প্রথম সুরে সুর মেলালাম । হঠাৎ গির্জার ঘড়িতে বারোটার ঘন্টা শোনা গেল । অতঃপর পরস্পর পরস্পরকে ‘মেরি ক্রিসমাস’ জানানো হল । সঙ্গে নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা । 

ডাকঘর 

Posted on

একটা কাজে আজ সকালে ডাকঘরে যেতে হয়েছিল । দেখতে পেলাম আজকের ডাকব্যবস্থার অবস্থা । প্রাচীন থেকে বর্তমানে আসার পথে অনেককিছু পরিবর্তিত হয়েছে । পরিবর্তন এসেছে জীবনে, জীবনযাপনে । পরিবর্তন এসেছে কাজে, কাজের ধরনে । আজকের ডাকব্যবস্থাও অনেক খোলস পাল্টে অনেক নতুন পরিষেবা, অনেক নতুন নিয়মনীতির উদ্ভব ঘটিয়ে আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে । লম্বা লাইনের সামনে কাউন্টারের ওপারে বসা ডাকঘরের কর্মীরা কাজে ব্যাস্ত । আমিও দাঁড়ালাম লাইনের শেষে । হঠাৎ ডানদিকে তাকাতে চোখে পড়ল মান্ধাতার আমলের খোপ খোপ টেবিল মুখবন্ধ খামে চিঠির বোঝা নিয়ে নিশ্চুপ বসে আছে । কিছু লোক কাজ করছে, কিন্তু তাদের শারীরিক ভঙ্গি দেখে কাজের থেকে অকাজ বেশি করছে বলেই যেন বোধ হল । বিভিন্ন ধরনের কাগজের স্তূপ । কোনটা চাকরিপ্রার্থীর চিঠি, কোনটা সরকারি দপ্তরের চিঠি, কোনটা বা বিশেষ বিভাগীয় চিঠি । আছে মানি অর্ডার, আছে পত্র-পত্রিকা । পার্সেলগুলো ঘরের কোণে স্তূপীকৃত । কোনটাতে হয়তো বইপত্র, কোনটাতে ওষুধ, কোনটাতে বা অন্যকিছু । এখন মোবাইল-ফেসবুকের যুগে খবরাখবর নিতে চিঠি প্রেরিত হয় না । কিন্তু আগে হত । বিকেলের ডাকে প্রেমিকের চিঠি এসে পৌঁছত সারাবেলা হাপিত্যেস করে বসে থাকা প্রেমিকার হাতে, যুদ্ধের ময়দান থেকে একমাত্র ছেলের স্বহস্তে লেখা চিঠি পড়ে শান্তি পেত মায়ের মন, কিংবা জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তাসহ একটা পোস্টকার্ড পৌঁছে যেত নির্দিষ্ট ঠিকানায় । ওই মুখবন্ধ খামগুলোর মধ্যে ভরা থাকতো কতশত অশ্রু, ভালবাসা, সুখ-দুঃখের কথা । কত জীবনের ওঠা-পড়ার গল্প, কত প্রেম বিনিময়, কত নিভৃত আলাপচারিতা । ওই খামগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকতো কত না জানি রহস্য । কিন্তু আজ তারা মুখ লুকিয়েছে ফেসবুকের দেওয়ালের পিছনে । এখন তারা চাপা পড়েছে ওয়াটস্ অ্যাপের স্টেটাস এর তলায় । সেইসময় এই ডাকঘরেই জমা হত খামভর্তি সুখ-দুঃখ, এখানেই হাতবদল হওয়ার অপেক্ষায় থাকতো বাক্সভর্তি হাসি-কান্নারা । আজ সেখানে শ্মশানের নিস্তব্ধতা । একটা খাম আরেকটা খামের খবর জানতে চায় না । একটা চিঠি জিজ্ঞেস করে না আরেকটা চিঠির গন্তব্য । আজ তারা নিষ্প্রাণ পড়ে আছে টেবিলের খোপে ।
কয়েকটা বই পার্সেল করার ছিল । স্পীড পোস্ট করে দিয়ে যখন বাইরে এসে দাঁড়ালাম তখন শীতের বেলায় রোদের তেজ খানিক ম্রিয়মান । এরকমই কোন বিকেলে হয়তো অপেক্ষারত প্রেমিকার কাছে পৌঁছে গেছিল প্রেমিকের খবর । হয়তো . . . . . . . ! বাড়ির পথে পা বাড়ালাম । 

আমি

Posted on

আমি অনেকটা গঙ্গার মত ।
যেমন পবিত্র, তেমনই কলুষিত . . .

খুঁজে নিও আমায় . . .

Posted on

মন কেমন বিকেলে হঠাৎ
যদি মনে পড়ে আমাকে
গোধূলির রঙে মেশা বকের পালকে,
খুঁজে নিও আমায়

ভ্রুযুগলের মাঝে ছোট্ট টিপের ছোঁয়ায়
যদি মনে পড়ে আমাকে
তোমার উপচে পরা চুলের ভাঁজে,
খুঁজে নিও আমায়

জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে গিয়ে
যদি মনে পড়ে আমাকে
ভেজা কার্ণিশের চুঁইয়ে পড়া জলের ফোঁটায়,
খুঁজে নিও আমায়
©রাজীব দাস

উত্তরের ডাক

Posted on

জানলা খুলতেই ভোরের প্রথম আলোর সঙ্গে ঝাঁপিয়ে ঢুকে পড়া একরাশ শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়ায় গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো । আদুর গায়ে চাদরটা জড়িয়ে নিয়ে ঘুম চোখে খানিক্ষণ বাইরে চেয়ে রইলাম । শীত কি এল তবে ! কিন্তু তা কি করে হয় ! এত অনাড়ম্বর আগমণ হতে পারে না । শোবার সময় লেপ কম্বলের প্রয়োজন পড়ছে না । রাস্তাঘাটে লোকজনের সঙ্গে শাল-সোয়েটারের প্রেম দেখা যাচ্ছে না । বাঙালীর বিখ্যাত হনুমান টুপি তোরঙ্গের কাপড়ের ভাঁজে শান্তির ঘুমে তলিয়ে আছে এখনও । তবে এ শীতের আগমন নয় নিশ্চই । চোখ বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করলাম হাওয়াদের ফিসফিসানি । হাওয়ারা বলে গেল, তিনি আসছেন । বেশি বিলম্ব নেই, অপেক্ষার নিরসন হবে শীঘ্রই । এ হল হাওয়াদের বয়ে আনা উত্তরের সংবাদ । আট-নয় মাস বাদে মনে পড়ল অবশেষে । মাঝে প্রচন্ড বৃষ্টির রাতে খবর পাঠিয়েছিল একবার । তারপর আবার সব শান্ত । সব চুপকথাদের মুখ ফুটেছে এবার । বুঝলাম এ আর কিছু নয়, এ হল উত্তরের ডাক ।

প্রথম চুম্বন 

Posted on Updated on

চোখের কোণে জমে থাকা মেঘ
বৃষ্টি ফোঁটায় গাল বেয়ে ঝরে
বেলাশেষে সন্ধ্যা নামে যখন
তোমার কথা বড্ড মনে পড়ে

মনে পড়ে প্রথম দিনের কথা
মনে পড়ে চোখের কাজলরেখা
চোখের কথারা অজানাই ছিল আগে
চোখেদের ভাষা তোমার কাছেই শেখা

আসলে তুমি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে
ভিজে শাড়ি লেপ্টে ছিল গায়ে
চোখ সরানো যাচ্ছিলো না চোখ থেকে
দেহের ওজন জমছিল দুই পায়ে

হঠাৎ পেলাম স্পর্শের অনুভূতি
ঠোঁটের সাথে ঠোঁট ছোঁয়ানোর সুখ
নিস্তব্ধ কিছু শীতল মুহূর্তরা
রাঙা হয়েছিল অবনত চিবুক

তোলপাড় বুক, রক্তিম দুটি কান
নত দৃষ্টি পায়ের আঙুল গোনে
প্রেমের ডাকে প্রেমিকের চিঠি গেল
জবাব এলো প্রেমিকার চুম্বনে

Qarib Qarib Singlle

Posted on

দেখে এলাম ইরফান খান এবং পার্বতী তীরুবতী অভিনীত ও তনুজা চন্দ্র পরিচালিত ‘করিব্ করিব্ সিঙ্গেল’ । একটা ডেটিং সাইট মারফৎ যোগী (ইরফান খান) আর জয়া-র (পার্বতী তীরুবতী) আলাপ হয় । জয়া অল্প বয়সেই বিধবা হয়েছে, অন্যদিকে যোগী তিন-তিনটে প্রেম করা সত্বেও বিয়ে করেনি এখনো । একদিকে চাকুরিজীবি, স্বাবলম্বী জয়া যতটা গম্ভীর, গোছানো, চুপচাপ, ব্যক্তিত্বময়, অন্যদিকে কবিতাপ্রেমী এবং কবি যোগী ততটাই অগোছালো, আত্মভোলা প্রকৃতির মানুষ । দুচারদিন কথাবার্তার পর যোগীর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে দুজনে তাঁদের প্রাক্তন সম্পর্কগুলো ফিরে দেখতে রওনা হবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । এই সমগ্র যাত্রার মধ্যেই একে অপরকে ভালোবেসে ফেলবে দুজনে ।
ইরফান খানের অপূর্ব অভিনয়ের ব্যাপারে বলার বিশেষ কিছু নেই । দক্ষিণী নায়িকা পার্বতী তীরুবতীর অভিনয় প্রশংসার দাবী রাখে । ছোট ছোট মুহূর্তগুলো এত নিপুণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন যে থিয়েটারের বাইরে বেরিয়ে এসেও তার অনুরণন চলতে থাকে মনের মধ্যে । পরিচালনা এবং সিনেমাটোগ্রাফি মোটামুটি ভালোই । সবথেকে বড় পাওনা ছবির সংলাপ । অফুরন্ত হাস্যরসের যোগান দিয়েছে ছবির সংলাপ । সবমিলিয়ে সপ্তাহান্তে দেখার মতো একটা ভাল ছবি ‘Qarib Qarib Singlle’ ।