সমালোচনা

উড়তা পাঞ্জাব : একটি ছবি . . কিছু কথা

Posted on Updated on

ইদানীংকালে দেখছি সীমা লঙ্ঘন করার একটা প্রবনতা সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে মহামারীর আকার ধারন করেছে । মানুষ তার সীমারেখা পার করলে যে কি ধরনের বিশৃঙ্খলা ও গণ্ডগোল হতে পারে, তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিককালে ‘উড়তা পাঞ্জাব’ ছবির কাজিয়া ।

প্রথামতে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন(CBFC)-এর ছাড়পত্র না পেলে কোন ছবি থিয়েটারে চলচ্চিত্রায়িত হতে পারে না । ইচ্ছেমত ছবির বিভিন্ন দৃশ্য, সংলাপ ইত্যাদি কাটছাঁট করায় CBFC -র সাথে ভারতীয় চিত্রপরিচালক ও প্রযোজকদের মতবিরোধ ও মনোমালিন্য বহুদিনের তা বলাই বাহুল্য । সেই মতবিরোধ চরমে পৌঁছেছে অভিষেক চৌবে পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি ছবি ‘উড়তা পাঞ্জাব’কে কেন্দ্র করে । শাহিদ কাপুর, করিনা কাপুর, আলিয়া ভাট প্রমুখ অভিনীত এবং ‘বালাজী মোশন পিকচার্স’ ও ‘ফ্যানটম ফিল্মস’ প্রযোজিত এই ছবি গড়ে উঠেছে পাঞ্জাবের তরুন প্রজন্মের উপর মাদকের কু-প্রভাবকে কেন্দ্র করে । সবকিছু ঠিকঠাক চললেও বেঁকে বসেছে CBFC প্রধান ‘পহলাজ নিহালনি’ । ছবির বেশ কিছু দৃশ্য, সংলাপ, বিভিন্ন নামের উল্লেখসহ প্রায় ৮৯ টি অংশ কাটছাঁট করার পরামর্শ দেন তিনি । অথচ এই ‘নিহালনি’ ভদ্রলোক CBFC প্রধান হওয়ার আগে নিজেই একজন প্রযোজক ছিলেন এবং তার প্রযোজিত বেশকিছু ছবিতে একাধিক আপত্তিকর দৃশ্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । তিনি তবে নিজের প্রযোজিত ছবিতে এই জাতীয় দৃশ্য রাখলেন কিভাবে ! আর নিজের ছবিতে রাখতে আপত্তি না থাকলে অন্যের ছবি নিয়ে আপত্তি কিসের !

udta-punjab

CBFC প্রধান পহলাজ নিহালনির এই স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘উড়তা পাঞ্জাব’ ছবির পরিচালক ও প্রযোজকমণ্ডলী আদালতের দ্বারস্ত হয়েছেন । এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে হইচই পড়ে গেছে । সাধারণ মানুষ থেকে খ্যাতনামা ব্যাক্তিবর্গ, নিন্দায় মুখর হয়েছেন সকলে ।

আমির খান, অমিতাভ বচ্চন প্রমুখ অভিনেতা, করণ জোহর, মুকেশ ভাট প্রমুখ পরিচালক সকলেই সমালোচনা করেছেন । খোলা চিঠি থেকে অনলাইন পিটিশন, বাদ নেই কিছু । সৃজনশীলতার পরিপন্থি এই জাতীয় মানুষ CBFC র প্রধান এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার যোগ্য কিনা তা বিচারসাপেক্ষ । পাঞ্জাবের তরুন প্রজন্মের মাদকের প্রতি আসক্তি ও তার কু-প্রভাব সেখানকার এক সামাজিক সংকট । মাদক কত তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, উজাড় করেছে কত মানুষের সংসার । সমাজের এই অন্ধকার দিক প্রকট হয়েছে ‘উড়তা পাঞ্জাব’ ছবিতে । এই ছবির উপর নানান নিষেধাজ্ঞা ও শর্ত আরোপ করে এই ছবির অন্তর্নিহিত বার্তা মানুষের কাছে পৌছতে বাধা দিয়ে তিনি কি প্রমাণ করতে চাইলেন ? সমাজ কলুষমুক্ত ? বাস্তবের কঠিনতাকে তিনি ঢাকা দিতে চাইছেন ! বাস্তবটা যে অ্যালিসের ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড’ নয় সেটা সকলেই জানে । শিল্প সর্বকালেই সমসাময়িক সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করেছে । আমরা প্রাচীন শিল্পকর্মতে তৎকালীন সময়, পরিবেশ, সামাজিক পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই । শিল্পকে কোনকালেই কোন শক্তিই ভয় দেখিয়ে বা বাহুবলের দ্বারা নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি এবং পারবে না তা আরও একবার প্রমাণ করলো ‘উড়তা পাঞ্জাব’ । পহলাজ নিহালনির অযৌক্তিক শর্তাবলীর বিরুদ্ধে আদালত রায় দিয়েছে । অবশেষে মাত্র একটি দৃশ্য বাদ দিয়ে ১৭ই জুন রিলিজ করেছে ‘উড়তা পাঞ্জাব’ ।

এই ছবি মুক্তি নিয়ে চাপানউতরে উল্টে ‘শাপে বর’ হয়েছে । সংবাদমাধ্যমের দৌলতে প্রচার হয়েছে অনেক বড় মাত্রায় । বক্স অফিস কালেকশন বেশ ভাল । প্রথম দিনেই ১০.৩ কোটি ছাড়িয়েছে , এবং পাঞ্জাবের থিয়েটারগুলোতে ভিড় হয়েছে দেখার মত । মানুষের এই আগ্রহ ও উন্মাদনাই নিহালনিদের হার ও এইখানেই এই ছবির জিত ।

Haramkhor_Poster new_.jpg[বর্তমানে আরও একটি ছবি নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া চলছে । ছবিটির নাম ‘হারামখোর’ । শ্লোক শর্মা পরিচালিত ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি এবং শ্বেতা ত্রিপাঠী অভিনীত এই ছবি গুজরাতের এক ছোট্ট মফঃস্বলের এক শিক্ষক ও তার ছাত্রীর অপ্রচলিত প্রনয়ের কাহিনিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে । একের পর এক ছবির উপর বিধিনিষেধের বেড়াজাল সিবিএফসি-র নির্লজ্জতাকেই প্রকট করছে । ]